কালাই উপজেলার লকইর গ্রামে আয়নাল হোসেন নামে এক যুবকের সাথে কক্সবাজারের উখিয়া আশ্রয়শিবিরের এক রোহিঙ্গা নারীর বিয়ে হয়েছে। গত (১১ জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার রাতে তারা গোপনে উপজেলার বানদীঘি গ্রামে মামুনুর রশিদের বাড়িতে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।এরপর থেকে রোহিঙ্গা নারী তার স্বামীর বাড়ি লকইর গ্রামে বসবাস করছেন।জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে কল পেয়ে পুলিশ ওই রাতে বানদীঘি গ্রামে গেলেও তাদেরকে আটক না করে সেখান থেকে ফিরে আসেন।
জানা যায়,উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বানদীঘি গ্রামের শিশু ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামী হারুনুর রশিদ ও সবুজ মিয়া গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন কক্সবাজারের রামু উপজেলাতে।সেখানে পরিচয় হয় আয়েশা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারীর সাথে।পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা দু’জন যাতায়াত করতেন ওই নারীর বাড়িতে।আয়েশা বেগমের ঘরে ছিল ১৯ বছর বয়সের মেয়ে রুমা খাতুন।মেয়েকে বিয়ে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয় তাদের সাথে।সবুজ মিয়ার ছেলের সাথে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেয়ার বিনিময়ে রুমার সাথে বিয়ের কথা পাকাপোক্ত হয়।কথামত রুমার মা আয়েশা বেগম ও-ই টাকা সবুজ মিয়ার হাতে দিয়ে দেয়।
গত ৯ জানুয়ারি আয়েশা বেগম মেয়ে রুমাকে নিয়ে তাদের সাথে কালাইয়ের বানদীঘি গ্রামে এসে হারুনুর রশিদের বাড়ি ওঠেন।এরপর সবুজ মিয়া তাদেরকে রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যান।অনেক খোঁজাখুঁজি করে সবুজকে না পেয়ে বিপদে পড়ে হারুনুর রশিদ আয়েশা বেগম ও তার মেয়ে রুমাকে একই গ্রামে তার ছোট ভাই মামুনুর রশিদের বাড়িতে রেখে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ থেকে রোহিঙ্গা নারী রুমার নামে ভূয়া জন্ম সনদ তৈরি করেন।এরপর একই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের লকইর গ্রামে তার ফুফাত ভাই আব্দুল মোমেনের ছেলে আয়নাল হোসেনের সাথে বিয়ে দেন।
রুমার মা আয়েশা বেগম বলেন,বিয়ে বাবদ সবুজকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়েছি।এখানে আসার পর সে আমাদের ফেলে পালিয়েছে।এখন বাধ্য হয়ে আমার ধর্ম ভাই হারুন সকল কাগজপত্র ঠিক করে প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই তার ফুফাত ভাইয়ের ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিয়েছে।
রুমা খাতুন বলেন,আমার কি অপরাধ?এই জয়পুরহাটে আমার মত আরও ৩/৪ জন রোহিঙ্গা মেয়ের বিয়ে হয়েছে।এখন আমার কেন সমস্যা হবে!আমার মা ও হারুন মামা স্থানীয় এক নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আমাদের বিবাহ সম্পূর্ণ করেছে।এখন আমি আয়নালের সাথে ঘর সংসার করছি।
বর আয়নাল হোসেন বলেন,“দেশে হিন্দু–মুসলিম বিয়ে হচ্ছে,সেখানে আমি রোহিঙ্গা মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেছি।তাতে আপত্তি কিসের!”তবে আইন অনুযায়ী যে রোহিঙ্গা মেয়েকে বিয়ে করা যাবেনা তা আমার জানা ছিল না।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন,জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল।সেখানে পুলিশ পৌঁছার আগে বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। মেয়েটি রোহিঙ্গা কিনা তা পুলিশের জানা নেই।
এ বিষয়ে জয়পুরহাট জজ কোটের আইনজীবী এ্যাড.রায়হান আলী বলেন,২০১৪ সালে আইন মন্ত্রণালয়ের জারীকৃত আদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা দম্পতিদের মধ্যে বিবাহ নিবন্ধন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।“প্রশাসন যদি মাঠপর্যায়ে আরও সক্রিয় হয় তাহলে বাংলাদেশিদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিয়ে করার প্রবণতা কমে আসবে।”
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :