মাদারীপুরে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হলেও নায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা। কৃষকদের অভিযোগ, প্রতিবছর সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরনের দাম বাড়লেও সরিষার দাম বাড়েনা কোনবছরই। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলালেও বাজারে সিন্ডিকেটের হাতে চলে যায় সরিষার লাভের বড় একটি অংশ। কৃষি বিভাগের দাবি, একসাথে নয়, অল্প করে বাজারে সরিষা বিক্রি করলে চাষিরা পাবেন নায্যমূল্য।
জানা যায়, মাদারীপুরের কালকিনির লক্ষ্মী ইউনিয়নের বিদ্যাবাগিস গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ সরদার। তার বাবাকে দেখে শিখেছেন কৃষি কাজ। সংসার বাঁচাতে কৃষিকাজ করেন কয়েক যুগ ধরে। এবার ৮ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন সরিষার। হয়েছে বাম্পার ফলনও। পাশের কৃষক আবুল কালাম ও দুলাল হোসেন খানের জমিতেও বিআর, বিনা, মাঘিসহ বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকায় ফলনও বেশ ভালই হয়েছে। কিন্তু সরিষার নায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা।
জেলার সরিষা চাষিদের অভিযোগ, প্রতিবছর বাড়ছে কৃষি উপকরনের দাম। সেই সাথে বেড়েছে উৎপাদন খরচও। এক মন সরিষার উৎপাদন খরচ ২৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকায় পৌঁছায়। অথচ, বাজারে পাওয়া যায় না ফসলের নায্যদাম। এতে গুনতে হয় লোকসান। এজন্য সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন কৃষকরা। তবে, কৃষকের মাঠজুড়ে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ায় বাজারে নায্য দাম পাওয়া গেলে গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার আশা চাষিদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গতবছর ১৫ হাজার ৮শ’ ৮৫ হেক্টর জমিতে ১৯ হাজার ৭৩ মেট্ট্রিক টন সরিষার আবাদ হয়। এ বছর ১৬ হাজার ৯’শ ৮২ হেক্টর জমিতে সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৭৬ মেট্রিক টন। জেলায় পৌনে দুই লাখ কৃষকের মধ্যে সরিষার আবাদ করেছেন ৬৭ হাজার ৯২৮ জন চাষি।
বিদ্যাবাগিস গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ সরদার বলেন, কষ্ট করে ফসল ফলাই, কিন্তু লাভের বড় অংশ চলে যায় ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের হাতে। সরকারও এ ব্যাপারে কোন তদারকি করে না। আমরা চাই, ফসলের নায্য দাম। এ ব্যাপারে সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান।
কৃষক দুলাল হোসেন খান বলেন, বাপদাদার আমল থেকেই আমরা কৃষি কাজের উপর চলি। প্রতিবছরই বাড়ছে কৃষি উপকরনের দাম, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বাজারে ফসল নিয়ে গেলে নায্য দাম পাই না। এর মূল কারণ, বাজারে বড় একটি সিন্ডিকেট, এই সিন্ডিকেট না থাকলে আমরা কৃষকরা লাভবান হতাম।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সন্তোষ চন্দ চন্দ্র জানান, নিজেরাই মজুদ করে বাজারে আস্তে আস্তে সরিষা ছাড়লে নায্য দাম পাবেন চাষিরা। এছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে সঙ্গে কৃষকদের নায্য দাম পেতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :