নরসিংদীর রায়পুরায় শিশুসন্তানসহ শ্বশুরবাড়িতে এসে ঠাঁই না পেয়ে সেই সন্তানকে সাথে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে আত্মহত্যা করতে যায় এক নারী। সেখান থেকে স্থানীয় জনগণ শিশুসন্তানসহ সেই নারীকে উদ্ধার করে। ওই নারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তার নাম খাদিজা ইসলাম পপি। বাড়ী কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানায়।
গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারী) মেথিকান্দা রেল স্টেশনের আউটডোরে রায়পুরা পৌরসভার শেষ সীমানায় এ ঘটনাটি ঘটে। পরে আজ শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারী) ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রায়পুরা থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত মীর মাহবুবুর রহমান।
স্থানীয়রা জানায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই নারী একটি শিশু সন্তানসহ রেললাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। পরে তার সামনের দিক থেকে একটি ট্রেন আসতে থাকে। তখন সেখানে থাকা লোকজন তাকে চিৎকার করে সরে আসতে বলে কিন্তু সে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। পরে স্থানীয় দুইজন যুবক দৌঁড়ে তাকে তার সন্তানসহ উদ্ধার করে।
আত্মহত্যা করার কারণ জানতে চাইলে খাদিজা বলেন, রায়পুরা উপজেলার উত্তরবাখরনগর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাজুল ইসলামের কুয়েত প্রবাসী ছেলে কবীর হোসেনের সাথে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে অনলাইনে আমাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর ছুটিতে কবীর দেশে আসে। তিনি জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭ নভেম্বর ইসলামের শরিয়ত মাফিক ২ লক্ষ টাকা কাবিনে আমাদের বিয়ে হয়। তারপর কবীর তার পরিবারকে মানাতে না পেরে পরিবারের কথায় ১৭ দিন পর আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলে। পরে তাদের বিয়ের প্রায় দের মাস পর আমি বিষয়টি জানতে পারি। তবে এর আগে কবীরের পরিবার থেকে তার জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে, সে বিয়ে ভেঙ্গে দিচ্ছে এমনটা শুনেছি কিন্তু কবীরের অনুরোধে আমি তাদের বাসায় গিয়ে বিষয়টা জানাইনি।
খাদিজা বলেন, তারপর আমি তাদের বিয়ের খবর শুনার পর কবীরকে জিজ্ঞেসা করলে সে বলে, সে বিয়ে করতে চায়নি তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে। সে ওই মেয়েকে ছেড়ে দিবে এসব কথা ছাড়াও আমাকে বিশ্বাস করানোর জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো সব করছে। এরপর সে আবার যথারীতি বিদেশে চলে যায়। এমতাবস্তায় আমাদের বিয়ের প্রায় সাত মাস পর সে আমাকে কুয়েতে নিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, সেখানে আমি ক্লিনারের চাকুরি করি। তার মা অসুস্থ হয় আমি তার মায়ের জন্য টাকা পাঠাই। তার পরিবারের সবাই তখন বিষয়টা জানে আমরাও বিদেশে একসাথে সংসার করছিলাম। তখন আমি বিদেশে থাকা অবস্থায় গর্ভবতী হই। আমার প্রেগন্যান্সির বয়স যখন ৭ মাস হয়, তখন আমি দেশে চলে আসি। আমি যে কোম্পানিতে কর্মরত ছিলাম সেখানে প্রেগন্যান্ট হয়ে কাজ নিষিদ্ধ ছিলো। পরে দেশে এসে আমি আমার বোনের বাসায় থেকে একটা মেয়ে সন্তানের জন্ম দিই। এখন আমার স্বামী আমাকে অস্বীকার করছে। সে আমাকে বিয়ে করে নাই, এ সন্তান তার না এগুলা ছাড়াও সে আমার এ অবুঝ সন্তানকে নিয়ে পর্যন্ত নোংরা কথা বার্তা বলছে তাই সন্তানকে নিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম।
তিনি আরো জানান, বেঁচে থাকলে আমার এ মাসুম বাচ্চাটাকে কুকুর বিড়ালের মতো মানুষ রূপী নরপিশাচরা ছিড়ে ছিড়ে খাবে তাই তাকে নিয়েই আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম।
খাদিজা বলেন, বিদেশে থাকা অবস্থায় আমার যতো টাকা-পয়সা ছিলো সবই তার কাছে। আমি বেতনটা পেলেই পাওনাদারদের দোহায় দিয়ে টাকা গুলো নিয়ে যেতো। স্বামী অপমান হবে ভেবে আমিও টাকা দিয়ে দিতাম। আর আজ আমার আর আমার মেয়েকে নিয়ে সে ও তার পরিবার নোংরা খেলায় মেতেছে। এখন কবীর বলে, সে আমায় বিয়ে করেনি, আমি টাকা দিয়ে কাবিন নামা করে এনেছি। এ বাচ্চা তার নয়। পরে নায্য বিচারের জন্য পুলিশ, উত্তরবাখরনগরের চেয়ারম্যান, মেম্বার, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ অনেকের কাছেই গিয়েছি। রায়পুরা থানায় লিখিত অভিযোগও করেছি। কারো কাছেই আমার এবং আমার জন্য মায়া হয়নি। পাইনি প্রাপ্য অধিকার, তাই বাধ্য হয়ে অবুঝ সন্তানকেসহ আত্মহত্যা করার পথ বেছে নিয়েছি।
অন্যদিকে কবীরের বাবা তাজুল ইসলাম জানান, এ মেয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে এমন কিছুই আমরা জানি না। আমার ছেলের স্ত্রী রয়েছে একটা নাতি আছে। আমি আমার ছেলের সাথে কথা বলেছি, সে বলেছে এ মেয়েকে সে বিয়ে করেনি। এখন আমি এ মেয়েকে ঘরে তুলতে পারবো না। কবীর কিছুদিন পর দেশে আসবে তখন তাকে আসতে বলেছি।
এ ব্যাপারে রায়পুরা থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত মীর মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনাটি শুনে সাথে সাথে ফোর্স পাঠানো হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে তার স্বামী দাবি করা ওই ব্যক্তিটি বিদেশে অবস্থান করছে। যেহেতু নারী দাবি করেছে তার স্বামী ভরনপোষণ দিচ্ছেনা সেজন্য তাকে পারিবারিক আদালতে গিয়ে ভরণপোষণের একটি মামলা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :