পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে বন্ধ ঘোষণার একদিন পরেই আবারও চালু করা হয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার তিন অবৈধ ইটভাটা। অভিযানে এক্সেভেটর (ভেকু) দিয়ে ভেঙে দেয়া দেয়ালের অংশ মেরামত করে একদিন পর থেকেই আবারও চালু হয়েছে কার্যক্রম। মাটি প্রস্তুত, ইট তৈরি, শুকানো ও পুড়ানোসহ সকল কাজ চলছে সমানতালে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) এবং পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও লোকালয়ের পাশে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে এসব ভাটা। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি ফসল ও গাছপালারও ক্ষতি হচ্ছে। কমে গেছে আশপাশের ফসলি জমির ফলন। এসব ইটভাটায় কাঁচমাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় ফসলি জমির মাটি। নিষিদ্ধ হলেও পোড়ানো হয় কাঠ। ইটভাটার কারণে কমছে ফসলি জমির পরিমাণ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আশপাশের ফসলি জমির মালিকরা।
গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট শাখা ও মানিকগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে হরিরামপুর উপজেলার তিনটি ইটভাটা-আমিন ব্রিকস, সততা ব্রিকস ও স্বাধীন ব্রিকসে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী সচিব) কাজী তামজীদ আহমেদ। অভিযানে আমিন ব্রিকসকে ৫ লাখ, সততা ব্রিকসকে ৫ লাখ এবং স্বাধীন ব্রিকসকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি প্রতিটি ইটভাটার দেয়ালের ১৫-২০ ফুট অংশ এক্সেভেটর দিয়ে ভেঙে দেয়া হয় এবং ভাটাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সরজমিনে তিনটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, অভিযানে ভেঙে দেয়া দেয়াল ইট ও সিমেন্ট দিয়ে মেরামত করে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। পাশাপাশি শ্রমিকরা মাটি প্রস্তুত, ইট তৈরি, শুকানো, শুকানো ইট ভাটায় ঢোকানো এবং পোড়ানো ইট ভাটা থেকে বের করছেন।
শ্রমিকরা জানান, অভিযানে ভাটাগুলোর ১৫-২০ ফিট অংশ এক্সেভেটর (ভেকু) দিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে। তবে, ভেঙে দেওয়া অংশ ইট, বালু ও সিমেন্ট দিয়ে মেরামত করে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ।
আমিন ব্রিকসের মালিক নুরুল আমিন এবছর আনোয়ার হোসেন নামের একজনকে অর্ধেক অংশের অংশীদার করেছেন। বন্ধ ঘোষণার পরেও ভাটা চালু করার বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, সবগুলোই তো অবৈধ। সবগুলোই তো বন্ধ করছে। তারপরও আবার সবগুলোই তো চলছে। অপরদিকে নুরুল আমিনের ছেলে শামীম হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "একটু কষ্ট করে ভাটায় আসেন ভাই। একসাথে চা খাই, আর কথা বলি।"
তবে, ভাটায় গিয়ে স্বাধীন ও সততা ব্রিকসের মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। সততা ব্রিকসের মালিক ও বলড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন খান কুন্নু এবং স্বাধীন ব্রিকসের একাংশের মালিক শীতল চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইউসুফ আলী বলেন, তারা যদি আবারও ভাটা চালু করে থাকে তাহলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী সচিব) কাজী তামজীদ আহমেদ বলেন, আমরা জরিমানা করে চুল্লি বন্ধ করে দিয়ে এসেছি। এরপরও যদি তারা চালায় এবং জেলা অফিস (পরিবেশ অধিদপ্তর) যদি আমাদের জানায়, রিকুইজিশন দেয় আমরা আবারও অভিযান পরিচালনা করবো।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :