অবশেষে নিজ ভূমি ভারতে ফিরে গেল পঞ্চগড় সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা দুই বন্য হাতি।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে বাংলাবান্ধা কাশিমগঞ্জ সীমান্ত পিলার ৭৩০ এর নিকটবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে হাতি দুটি বলে জানিয়েছে ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন। হাতিগুলো ফিরে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মনে স্বস্তি ফিরেছে।
এর আগে, সন্ধ্যার দিকে হাতির ধাক্কায় নুরুজ্জামান নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে পঞ্চগড় জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালে সে মারা যায়।
বিজিবি জানায়, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবির অধীনস্থ রওশনপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ৭৩৫/২ এস এর মধ্যবর্তী ইসলামবাগ এলাকা দিয়ে দুটি ভারতীয় বন্য হাতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে এগুলো তিরনইহাট এলাকা হয়ে গোয়ালগছ বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্তে কাশিমগঞ্জ এলাকায় এসে অবস্থান নিয়ে বেপরোয়া হয়ে কিছু বাড়ি ঘরে সামান্য ভাঙচুর করে। এতে করে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের নিরাপত্তার স্বার্থে বিজিবি, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। অনুপ্রবেশ করা হাতি দুটিকে বিরক্ত না করতে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়।
পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় বিকেল ৪টায় কাশিমগঞ্জ সীমান্ত এলাকার ৭৩০ পিলারে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বন বিভাগের প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধনের জন্য পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশে আসা হাতি দুটি ভারতে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশের বন বিভাগের সদস্যদের সঙ্গে ভারতীয় বন বিভাগ বিভাগের সদস্যদের আলোচনা হয়।
সন্ধ্যার পরে বিজিবি, বিএসএফ ও উভয় দেশের বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে সীমান্ত পিলার ৭৩০ দিয়ে হাতি দুটি ফাঁসিদেওয়া সীমান্তে প্রবেশ করে ভারতে চলে যায়। বিজিবিকে তথ্যটি ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ নিশ্চিত করেছে।
বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলন বলেন, হাতি দুটি বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের কাশিমগঞ্জ থেকে ভারতে চলে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক কেটে স্বস্তি ফিরেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয়রা খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এজন্য বিজিবি, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার রওশনপুর দিয়ে দু’টি ভারতীয় বন্য হাতি প্রবেশ করে। এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। হাতি দেখতে শতশত উৎসুক জনতার ভিড় জমেছে। স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালে দু’টি বন্য হাতি রওশনপুর হয়ে দৌলতপাড়া দিয়ে দক্ষিণ কাশিমগঞ্জে প্রবেশ করে। আসার পথে দুই-তিনজন কৃষকের গৃহপালিত প্রাণির উপর আক্রমণ করে। পরে কাশিমগঞ্জের বেশ কিছু বাড়িতে ঢুকে বৈদ্যুতিক তার, মোটরের তার, টয়লেট, বেড়া, পিঁয়াজ ও ভূট্টা খেতের ক্ষতি করেছে। এই খবর জানাজানি হলে আশেপাশে বসবাসকারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তবে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
বন বিভাগের কর্মকর্তা নুরুল হুদা বলেন, বাংলাবান্ধার কাশিমগঞ্জে দু’টি বন্য হাতির খবর পেয়ে আমাদের বনবিভাগের কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এসেই জনসাধারণকে নিরাপদে রাখতে হ্যান্ড মাইক দিয়ে দূরে থাকতে বলা হয়।
এরপর গ্রামের একটি ভুট্টা খেতে ঢুকে পড়ে বন্যহাতি দুটি। ভুট্টা খেতে দিনভর হাতি দুটি অবস্থান করে। বিকেলের দিকে ভূট্টা খেত থেকে বের হয়ে হাতি দুটি খেতের পাশের চা বাগানে আসে। স্থানীয় বাসিন্দারা হাতি দুটিকে তাড়াতে কিছুটা সামনে এগিয়ে যান। এসময় হাতিও সামনের দিকে এগিয়ে আসে। স্থানীয় লোকজন দৌঁড়ে পালিয়ে গেলেও নুর জামান পড়ে যান এবং হাতির আক্রমণের শিকার হন। হাতি কিছুটা সরে গেলে স্থানীয় লোকজন নুর জামানকে উদ্ধার করে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুর জামান।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :