মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে হিজাব না পড়ে স্কুলে আসায় সপ্তম শ্রেণির ৯ জন ছাত্রীর চুল কেটে দিয়েছে স্কুলের শিক্ষিকা রুমিয়া সরকার।
এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ঐ শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মিজানুল ইসলামকে আহবায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে। ছাত্রীদের হিজাব পড়ে না আসায় চুল কেটে দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে ২৮ ফেব্রুয়ারী বুধবার বিকালে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার সৈয়দপুর আব্দুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে।
বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ এই নির্দেশনা দেন। এর আগে নির্বাহী অফিসার কতৃপক্ষসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছেন। ছাত্রী মাইসা জাহান ও যমুনা আক্তার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমাদের সহ ১০/১১ জনের চুল কেটে নিলেন বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়ের শিক্ষিকা রুমিয়া সরকার। যাদের চুল কেটে ফেলা হয়েছে তারা হলেন, সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী মাইসা জাহান, তানজিলা আক্তার, আনীল আক্তার, তাসফিয়া, মাহাদিয়া, সুমাইয়া ও ইফাসহ ৯ জন। হিজাব পড়ে স্কুলে না আসার কারণে তাদের চুল কেটে নেয়া হয় বলে তারা জানান।
মাইসা জাহান জানান, আমার একটাই হিজাব, ঐ হিজাবটা ময়লা হয়ে গেছে তাই ধুয়ে দিয়েছি। এজন্য স্কুলে পড়ে যেতে পারিনি। ম্যাডামকে অনেক অনুরোধ করে বললাম, তারপরও রক্ষা পাইনি। ম্যাডাম আমাদের চুল কেটে দিল। তাই আমি আর স্কুলে যাব না। মাইসা জাহান ও তানজিলা আক্তারের বাড়ী সিরাজদিখান উপজেলার সৈয়দপুরে, আনীলা আক্তার ও তাসফিয়ার বাড়ী একই উপজেলার মোহাম্মদপুরে, মাহাদিয়া ও সুমাইয়ার বাড়ী মধুপুরে, ইফার বাড়ী বাঐখোলা গ্রামে। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। মাইসা জাহানের পিতা কহিনুর মিয়া বলেন, আমার মেয়ে অন্যায় করেছে বললেই হতো আমরা তার ব্যাবস্হা নিতাম। তাই বলে তাকে চুল কেটে ন্যাড়া বানিয়ে দিল। এটা কি ধরনের শাসন, এটা কি কোন অন্যায় নয়। তাই আমার মেয়েটা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে ও আর স্কুলে যেতে চাইছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ স্কুলের এক শিক্ষক জানান, বর্তমান সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ গোলাম হোসেন, তিনি সভাপতি হওয়ার পর ছেলে মেয়েদের ড্রেসকোড চেঞ্জ করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি শিক্ষকদের খুব চাপে রাখেন। অভিযুক্ত শিক্ষিকা রুমিয়া সরকারের সাথে সাক্ষাৎ করা যায়নি। অনেক চেষ্টার পর মোবাইলে রিং বাজলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
সৈয়দপুর আব্দুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিয়া মোঃ ফরিদ বলেন, ক্লাসেই কেচি ছিল তাই হাতের কাছে পেয়ে এ কাজ করে ফেলেছে। তবে ঘটনাটি অন্যায় ও দুঃখজনক।
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ বলেন, আমরা ঘটনা জেনেছি। ইতিমধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করছি। অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তারপর পরবর্তী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :