বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)`র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও সব মানুষের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসার অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে কমিউনিস্ট পার্টি। শনিবার পীরগঞ্জ উপজেলা সিপিবি’র সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত যারা পালাক্রমে শাসন ক্ষমতায় ছিল এবং আছে তারা মেহনতি মানুষকে অমর্যাদায় রেখেছে। সম ভোটের অধিকারের কথা থাকলেও ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এক ভোটে সবার সমান অধিকার থাকলেও যেসব মেহনতি মানুষের শ্রমে ঘামে অর্থ বিত্ত গড়ে উঠেছে তারা আজ অর্ধপেটা খেয়ে, নিজের সন্তানকে চিকিৎসা, শিক্ষা দিতে না পেরে দিন অতিবাহিত করছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে নীতিহীন রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। একই সাথে নীতিনীষ্ঠ রাজনীতির পতাকা তলে সমবেত হতে হবে। তিনি কৃষকের ফসলের লাভজনক মূল্য ক্ষেতমজুরের ১২ মাসের কাজের নিশ্চয়তা এদের সন্তানদের শিক্ষা চিকিৎসার ও শেষ বয়সে পরিপূর্ণ পেনশন ব্যবস্থা প্রদানের দাবি জানান।
রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, আমরা এই ৫৩ বছরের বাংলাদেশে অনেক কিছুই তো দেখলাম। এখন রাজনীতি দুর্বৃত্তদের হাতে বন্দি। এরাই পালাক্রমে ক্ষমতা দখল করে আছে। এদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। একই সাথে গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাটতন্ত্র সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্য বাদের বিরুদ্ধেও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ করে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার পাচারের টাকা উদ্ধার, খেলাফী ঋণ আদায় ও দুর্নীতি- লুটপাট বন্ধে কোন উদ্যোগ নেয় না। রাস্তাঘাট, হাটবাজারে ইজারা, ভূমি অফিসের দূর্নীতি, চাঁদাবাজি দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। একদিকে উপরের নোট দূর্বৃত্তায়নি রাজনীতি ও এদের স্থানীয় দুর্বৃত্ত চক্রের হাতে সাধারণ মেহনতি মানুষ বন্দী। জীবনের মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারছে না। তাই আজ মানুষ হিসাবে মেহনতি মানুষকে যার যার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণ আন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, রাজধানীতে বসে অনেকেই বলেন- মানুষ ভালো আছে, তাদেরকে বলি একটু গ্রামে আসেন, শহরতলীতে আসেন, সাধারণ মানুষের চেহারা দেখেন। অপুষ্টি, চিকিৎসাহীন, শিক্ষাহীন মানুষকে যদি ভালো থাকা বলেন তাহলে বলার কিছু নেই ।
তিনি সরকারের ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, কিছু ব্যবসায়ীদের ও কমিশন ভোগীদের সুযোগ দিতেই বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ গ্যাস , নবায়নযোগ্য জ্বালানি থাকার পরও জ্বালানিখাত কে জাতীয় অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের গলার কাটায় পরিণত করা হয়েছে। সরকারের এই ভুলনীতি ও দুর্নীতির দায় জনগণের কাধে চাপিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এটা কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না।
তিনি গরিব মানুষকে বিনামূল্যে ন্যূনতম ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ফ্রি দেওয়ারও আহবান জানিয়ে বলেন, কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় গেলে এই কাজটি করবে।
তিনি গণতন্ত্র ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিনা ভোটে নির্বাচিতরা কখনোই জনগণের স্বার্থে কাজ করবে না। তাদের জবাবদিহিতা থাকবে না। স্বচ্ছতা থাকবেনা। তাই মেহনতি মানুষকে নিজেদের দাবির সাথে সাথে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ে শরিক হতে হবে। ক্ষমতাসীনরা দেশটাকে আজ এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, তরুণ প্রজন্ম দেশকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে না । তথ্যই বলছে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রাপ্ত তরুণ কাজ না করে অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার চিন্তায় বিভোর তারা। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে এটি কাম্য হতে পারে না। কমিউনিস্ট বামপন্থীরা ক্ষমতায় গেলে মানুষের মর্যাদা, সম্পদের সুষম বন্টন, সকলের শিক্ষা, চিকিৎসা, কাজ ও নতুন প্রজন্মের সামনে সবার উপযোগী বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃশ্যমান কাজ করবে।
পীরগঞ্জ পৌরসভা মাঠে সিপিবির পীরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি প্রভাত সমীর শাহজাহান আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিপিবি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আশরাফুল আলম, সিপিবির ঠাকুরগাঁ জেলা সভাপতি ইয়াকুব আলী, জেলা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবু সায়েম, সৈয়দ মিজানুর রহমান বক্তৃতা করেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিবি পীরগঞ্জ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মোঃ: মোর্তুজা আলম। এর আগে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সিপিবির ঠাকুরগাঁও জেলা সভাপতি ইয়াকুব আলী। পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত শ্রমজীবী নারী পুরুষ মিছিল করে উদ্বোধনী সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশ শেষে লাল পতাকার এক বর্ণাঢ্য মিছিল পীরগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়ক ও প্রদক্ষিণ করে।
বিকালে পীরগঞ্জ পৌর অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলর অধিবেশনে প্রভাত সমীর শাহজাহান আলম কে সভাপতি ও মোঃ: মোর্তুজ আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩১ সদস্যের উপজেলা কমিটি নির্বাচন করা হয়।
একুশে সংবাদ/ল.ল.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :