শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার লাউখোলা বাজার থেকে চরধুপুড়িয়া সংযোগ সড়কের মাঝে ৭টি বিদ্যুৎ খুটির কারণে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ও এলাকার মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। রাতের অন্ধকারে প্রতিনিয়ত পথচারী ও যানবাহন প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। তাই পল্লী বিদ্যুতের ঐ খুটিগুলো দ্রুত সরিয়ে নেয়ার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর ১১ নভেম্বর উদ্বোধন হয়েছে লাউখোলা বাজার থেকে চরধুপুড়িয়া এলাকায় যাওয়ার নতুন সেতু। ঐ সেতুটিসহ একই নদীর উপর নির্মাণ করা আরও একটি সেতু মিলে একটি প্যাকেজে এর নির্মাণ ব্যয়ের বাজেট ছিল ২৩ কোটি টাকা। কাজটি সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হা-মীম ইন্টারন্যাশনাল।
ঐ সেতু ব্যবহার করে চলাচলকারী কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, এসব খুঁটির কারণে আমাদের স্কুল ও মাদ্রাসায় যাতায়াতে খুবই সমস্যা হচ্ছে এবং এখান দিয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন খুঁটির সাথে ধাক্কা লেগে মাঝে মাঝেই ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জনাব সুলতান মাদবর বলেন, "রাতের বেলা ওই খুটির সাথে ধাক্কা লেগে অনেকেই হাত-পা ভেঙ্গে আহত হয়েছে। আমি নিজেও একদিন রাতে খুঁটির সাথে ধাক্কা লেগে মাথায় আঘাত পেয়েছি। খুঁটিগুলোতে সড়ক বাতি না থাকায় রাতের বেলায় যেকোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঝুঁকির সম্ভাবনা আছে।"
স্থানীয় ব্যবসায়ী জনাব লাল খা নামের এক ব্যক্তি বলেন, "এখানে ব্রীজটি হওয়ায় দু-পাশের মানুষের ভোগান্তি যেমন কমেছে কিন্তু সেতুর দুইপাশে সড়কের মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় এখন মৃত্যু কূপে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুতের তারগুলো ঝুলে অনেক নিচে চলে আসায় বড় ধরণের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেক বেশী আছে।"
স্থানীয় অটোরিক্সা চালক জনাব আব্দুর রাজ্জাক খালাসী বলেন, "এখান দিয়ে আমি নিয়মিত যাত্রী নিয়ে চলাচল করি। সবসময় ভয়ে চলতে হয়। কারন বিদ্যুতের খুঁটিগুলো ব্রীজের দুইপাশে রাস্তার ঠিক মাঝে আছে।"
মিন্টু চৌকিদার নামে স্থানীয় এক ভ্যান চালক আজকের প্রসঙ্গকে বলেন, "ব্রীজটি হওয়ায় আমাদের এলাকার লোকদের চলাচলে অনেক সুবিধা হয়েছে। কিন্তু ব্রীজের দুইপাশে রাস্তার মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় আমি সবসময় ভয়ে ভয়ে এখান দিয়ে চলাচল করি।"
স্থানীয়দের অভিযোগ এই সড়কটিতে প্রতিনিয়ত শত শত যানবাহন চলাচল করলেও এ সমস্যা সমাধানে কারো কোন উদ্যোগ নেই। সমস্যার সমাধান করতে পারেন এমন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েও কোন কাজ হয়নি।
এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্তৃপক্ষ একজন আরেকজনের উপর দ্বায় চাপাচ্ছেন। কেউ মানতে নারাজ সড়কটির এই ভয়ঙ্কর পরিণতিতে তাদের গাফিলতি আছে।
শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জনাব মোঃ আলতাপ হোসেন বলেন, "সড়কের কাজ করার আগে বা পরে এলজিইডি কিংবা ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে খুঁটি সরাতে হবে এমন কোন লিখিত আবেদন পাইনি। তাই এবিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবো।"
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জাজিরা উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইমন মোল্লা বলেন, "বিদ্যুৎ অফিসে আমরা মৌখিকভাবে জানিয়েছি। তারা চাইলে কাজটি জরুরী হিসেবে সম্পন্ন করতে পারত। কিন্তু তারা আমাদের কাছে যে পরিমাণ অর্থ দাবী করেন তা দিয়ে আমরা সেতুর দুপাশের সংযোগ সড়কের শাখা সুন্দরভাবে প্রস্তুত করেছি।"
পরে ঐ সেতু নির্মাণে ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, `আমার কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য নেই। পেতে হলে জেলা দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে।`
বিষয়টি নিয়ে জেলা সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী জনাব ওয়াহিদুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, "এই তথ্য দিয়ে কি হবে? আর এটি অনেক পুরনো ফাইল, খুঁজতে সময় লাগবে। আপনি উপজেলা অফিসে যোগাযোগ করেন। ওখানে আছে।"
একুশে সংবাদ/ক.জ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :