লালমনিরহাটের আদিতমারীতে জমিজমা ও লালমনিরহাট শহরের বাসা-বাড়ি ছেলে-মেয়েদের নামে লিখে না দেওয়ায় বাবা-মাকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে পাষন্ড ছেলে-মেয়েদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সহিদুর রহমান ছেলে, মেয়ে, পুত্র বধু, জামাতা ও তাদের ভাড়াটিয়া লোকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আদিতমারী উপজেলার মদনপুর এলাকার মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে সহিদুর রহমান (৭০) এর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রায় ১মাস পূর্বে হাফিজা খাতুন (৫৭) নামের এক বিধবা মহিলাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে তার ছোট ভাই ওয়াজেদ আলীর বাড়ীতে অবস্থান করেন। কিন্তু বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় তার নামের সম্পত্তি ও সদর উপজেলার পৌর এলাকার বালাটারীতে থাকা বাসা-বাড়ি ছেলে মেয়েদের নামে লিখে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় হুমকি প্রদান করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ মার্চ সন্ধ্যা ৬টার ছেলে, মেয়ে, পুত্রবধু, জামাতা ও তাদের ভাড়াটিয়া লোকরা মিলে সহিদুর রহমান তার ছোট ভাই ওয়াজেদ আলীর বাড়ীতে অবস্থান করার সময় তাকে ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী হাফিজা খাতুনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। ওই সময় সহিদুর রহমান তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে তার স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি ডাং মার করে শরীরে ফোলা ছিলা জখম সৃষ্টি করেন। এমনকি সহিদুর রহমানের স্ত্রীর পরনের কাপড় টানা হেঁচড়া করিয়া বিব্রস্ত করে শ্লীলতাহানি ঘটায়। স্ত্রীকে সহিদুর রহমান বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাকেও এলোপাতাড়ি ডাং মার করে শরীরে ফোলা ছিলা জখম সৃষ্টি করেন। ওই সময় সহিদুর রহমানের প্যান্টের পকেটে থাকা ৫ হাজার টাকা, তার স্ত্রীর স্বর্ণের কানের দুল ও গলার চেইন ছিনিয়ে নেয়। পরে সহিদুর রহমানকে হত্যার হুমকি দিয়ে একশত টাকার মূল্যের ৩টি ফাঁকা স্টাম্পে তার স্বাক্ষর সহ জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন সহিদুর। তাদের নির্যাতনে ভুক্তভোগী ও তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে খুন করে লাশ গুম করে দিবো বলে হুমকি দিয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
পরে ভুক্তভোগী সহিদুর রহমান ও তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে আহত অবস্থায় এলাকাবাসী স্বামী ও স্ত্রীকে উদ্ধার করে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। যার রেজি নং-২০১৯/৮ ও ২০১৮/৭। ভর্তির পর ভুক্তভোগী সহিদুর রহমানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে রেফার্ট করেন। বর্তমানে ভুক্তভোগী ওই বাবা সহিদুর রহমান লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ১০ নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যার রেজি নং-১৩৭০/১৫৩।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সহিদুর রহমান বাদী হয়ে সদর উপজেলার বালাটারী এলাকার বাসিন্দা বাবু আল রশিদ এর স্ত্রী দৌলতুন নাহার রুমি (৩৯), মাহামুদ হাসান মিম (২৮) ও তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসি জিসা (২৫), আদিমারী উপজেলার বিসিক এলাকার সেকেন্দার আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৫৫) ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর পুত্র সেকেন্দার আলী (৫৭)। জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী এলাকার মোস্তাফিজার রহমানের স্ত্রী আজমিরা রহমান সাথী (৩২), আদিতমারী উপজেলার মদনপুর এলাকার বদিয়ার রহমানের মেয়ে আয়না খাতুন (২৭) ও মৃত মহির উদ্দিনের পুত্র লিয়াকত আলী (৪০), সদর উপজেলার বালাটারী এলাকার মৃত আখলাক হোসেনের পুত্র বাবু আল রশিদ (৪৫) ও আদিতমারী উপজেলার মদনপুর এলাকার শহিদার রহমান ওরফে ভেলেন এর পুত্র রায়হান উদ্দিন (২৫) সহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অশ্রুসিক্ত নয়নে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সহিদুর রহমান বলেন, আমার ছেলে, মেয়ে, পুত্র বধু, জামাতা ও তাদের ভাড়াটিয়া লোক মিলে দীঘদিন ধরে জমিজমা ও শহরের বাসা-বাড়ী তাদের নামে লিখে চান। আমি এতে রাজি না হওয়ায় তারা সকলে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। ওই সময় তারা টাকা, স্বর্ণের দুল ও চেইন সহ হত্যার হুমকি দিয়ে ৩টি ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর সহ জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। আমি থানা অভিযোগ দিয়েছি। আইনের মাধ্যমে বিচার চাই।
এ ব্যাপারে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহমুদ-উন-নবী বলেন, ভুক্তভোগী বাবার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একুশে সংবাদ/জ.ব.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :