শরীয়তপুরের জাজিরার কাজিরহাট বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর শরীয়তপুর এর সহকারী পরিচালক সূজন কাজী।
রবিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে কাজিরহাটের ফলপট্টিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।তবে ম্যাজিস্ট্রেট গাড়ি দেখেই মুহূর্তে লুকিয়ে ফেলা হয় ওজন মাপার স্কেল মেশিন।
জানা গেছে, কাজিরহাট বাজার সহ জাজিরার বিভিন্ন বাজার গুলোতে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিলো মৌসুমি ফল তরমুজ, এছাড়াও লাগামহীন দামে বিক্রি হচ্ছিলো খেজুর সহ ইফতারে প্রয়োজনীয় নানা ফল।
তবে বাজার মনিটরিং এ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের গাড়ি দেখে মুহূর্তে লুকিয়ে ফেলা হয় সবগুলো তরমুজের দোকানের ওজন স্কেল ও কমিয়ে ফেলা হয় নিত্য প্রয়োজনীয় ফলের দাম।
এসময় অভিযানে তরমুজের দোকানগুলোতে গিয়ে জানতে চাইলে দোকানিরা জানায় পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। ক্রয় রশিদ দেখে বড় ও ছোট তরমুজের সম্ভাব্য দাম নির্ধারণ করে দেন ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং এই মূল্য অব্যাহত রাখার জন্য তদারকি করার নির্দেশ দেয়া হয় কাজিরহাট বাজার কমিটিকে।
এই সময়ে সরজমিনে দেখা যায় সাধারণ ক্রেতাদের উপচে পরা ভিড়, ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি দেখে ওজন স্কেল সরিয়ে পিস হিসেবে বিক্রিত তরমুজ কিনছে অসংখ্য মানুষ।কারণ যে তরমুজ টি আগে কেজিদরে ৬০০ টাকা বিক্রি হতো সেটি ওজনস্কেল সরিয়ে নেয়ায় দাম পরছে ৩০০-৩২০ টাকা।
দোকানীরা মুহুর্তে দাম কমিয়ে দেয়ার অনেক ক্রেতা জানায় দাম এমন থাকলে সবার পক্ষে রমজানে তরমুজ সহ ফল খাওয়ার সুযোগ হবে।
অভিযান পরিচালনার সময় দুইটি প্রতিষ্ঠানকে মূল্যতালিকা না রাখায় জরিমানা করা হয়।এদের মধ্যে ভাই ভাই বানিজ্যলায় কে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।পূর্বে সতর্ক করা হলেও এই প্রতিষ্ঠানে মূল্যতালিকা প্রদর্শন করেন নি এমনটা জানিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার ম্যাজিস্ট্রেট সুজন কাজী।
এসময় সহকারী পরিচালক সুজন কাজী একুশে সংবাদকে বলেন, রমজানে মৌসুমি ফল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের মূল্য তদারকির জন্য কাজিরহাট বাজারে এসেছি। আমরা বাজারে ফলের দোকান গুলোতে দেখেছি যে সব ফল রয়েছে সেগুলো কিভাবে বিক্রি হচ্ছে এবং কত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।আমরা তরমুজের দোকানগুলোতে গিয়ে তাদের ক্রয় ভাউচার দেখেছি, ক্রয় ভাউচার চেক করার পরে যৌক্তিক যে মূল্য সে মূল্যে তরমুজ বিক্রি করার নির্দেশ দিয়েছি।খেজুর, কলা সহ অন্যান্য ফলের দোকানগুলো ক্রয় ভাউচার ও বিক্রয় ভাউচার চেক করেছি এবং এ ক্ষেত্রে কতোটুকু মানাফার ব্যবধান করা হচ্ছে সেটিতে আমরা তদারকি করেছি। দুই-একটি প্রতিষ্ঠানে আমরা অনিয়ম পেয়েছি তাদেরকে আমরা জরিমানা করে সতর্ক করেছি।পুরো রমজান মাস জুড়ে জেলার বিভিন্ন বাজারে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে
এদিকে শুক্রবার (১৫ মার্চ) সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে প্রজ্ঞপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, নতুন এ দাম তিনটি স্তরে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। একটি পণ্য উৎপাদক পর্যায়ে সর্বোচ্চ দাম, পাইকারি বাজারে এবং ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা দাম কত হবে সেটা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, পাইকারি বাজারে ছোলার দাম সর্বোচ্চ সাড়ে ৯৩ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৯৮ টাকা। মসুর ডাল খুচরা পর্যায়ে ১৩০ টাকা ৫০ পয়সা এবং মোটা দানার মসুর বিক্রি হবে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সায়। খেসারি ডালের খুচরায় সর্বোচ্চ দাম হবে ৯৩ টাকা। এছাড়া মাসকালাই ১৬৬ টাকা ৫০ পয়সা এবং মুগডাল খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ১৬৫ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬৪ টাকা। এছাড়া ছাগলের মাংসের দাম ১ হাজার ৩ টাকা এবং মাছের মধ্যে চাষের পাঙাশের খুচরা দাম ১৮১ টাকা ও কাতলা মাছের দাম সর্বোচ্চ ৩৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা দরে কিনতে পারবেন ক্রেতারা। প্রতি পিস ডিমের দাম হবে সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ টাকা।
প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ টাকা, রসুন ১২০ টাকা ও আদা ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হবে। শুকনো মরিচের সর্বোচ্চ দাম হবে ৩২৭ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৬০ টাকায় খুচরা বাজারে কিনতে পারবেন ক্রেতারা।
সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, প্রতিকেজি বেগুন ও সিম ৫০ টাকা ও আলু সাড়ে ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৪ টাকা খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি।
অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি জাহেদী খেজুর ১৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সাগর কলার হালি খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চিড়ার খুচরা দাম ৬০ টাকা, বেসন ১২১ টাকা বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর।
পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত দামে কৃষি পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে বলা হয়েছে। সরকারের নির্ধারিত দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :