২০১৮ সালে সাধারণ যাত্রীদের সুবিধার্থে ময়মনসিংহে ৪৭টি বিআরটিসি বাস চালু করে সরকার। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে যাত্রী কমে যাওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কিছু বাস ময়মনসিংহ থেকে অনত্র সরিয়ে নেয়া হয়। বর্তমানে ময়মনসিংহে বিআরটিসির ২৯টি বাস চলাচল করছে। সময়মতো সেবা ও কম খরচে যাত্রী পরিবহন করায় খুব কম সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বিআরটিসির বাস সার্ভিস। যদিও ব্যক্তি মালিকানাধীন পরিবহন শ্রমিকরা এতে অখুশি। তারা বিআরটিসির বাস বন্ধের দাবিতে সোচ্চার। বিভিন্ন সময় তারা বিক্ষোভ-সমাবেশও করেছে। কিন্তু বিআরটিসি বাস এরই মধ্যে সাধারণ যাত্রীদের আস্থা অর্জন করে নিয়েছে। ফলে যাত্রীরা চান না কোনোভাবেই বিআরটিসির বাস বন্ধ হোক।
গত ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিআরটিসির বাস বন্ধের দাবিতে নগরীর পাটগুদাম ব্রিজমোড় এলাকায় তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ব্যক্তি মালিকানাধীন পরিবহন শ্রমিকরা। এতে ময়মনসিংহ থেকে শেরপুর, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা শেষে অবরোধ সরিয়ে নেয় তারা। সেদিন টানা তিন ঘণ্টা পর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে, সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন পরিবহন শ্রমিকরা অযৌক্তিক দাবি করছেন। বিআরটিসির বাস ভালো সার্ভিস দেয়। ষড়যন্ত্র করে তারা এটিকে বন্ধ করতে চায়। তারা তো সাধারণ যাত্রীদের সুবিধার কথা ভাবছে না। তারা নিজেদের কথা চিন্তা করছে। কিন্তু তারা নিজেরাও সার্ভিস ঠিকমতো দিতে পারে না।
ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কে চলাচলকারী যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, বিআরটিসি বাসে ভাড়া কম হওয়ায় যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারেন। এছাড়া চালক সতর্ক থেকে গাড়ি চালান। কিন্তু ব্যক্তি মালিকানাধীন বাসগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। অনেক চালক সিগারেট খেতে খেতে গাড়ি চালান। মনোযোগ থাকে অন্যদিকে। এতে মাঝে-মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। বিআরটিসি বাস বন্ধের আগে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাসগুলোর চালকদের সতর্ক হতে হবে। তাদের বাসের ভাড়া কমাতে হবে।
এম কে সুপার বাসের চালক আব্দুল হাই বলেন, বিআরটিসি বাস চলার কারণে এম কে সুপার ও শ্যামল ছায়া বাসে যাত্রী কমে গেছে। কোনো যাত্রী এসব বাসে উঠতে চান না। এসব বাসের মালিক অব্যাহত লোকসান গুনে যাচ্ছেন। এতে চালক-শ্রমিকরাও কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
এম কে সুপার ও শ্যামল ছায়া বাসের পরিচালনা কমিটির সভাপতি তারা মিয়া জানান, পাটগুদাম ব্রিজ মোড় থেকে এম কে সুপারের ৬০টি এবং শ্যামল ছায়া পরিবহনের ৪০টি বাস চলাচল করে। আর ডাবল ডেকারের বিআরটিসি বাস চলে ৮টি। ভাড়া কম হওয়ায় যাত্রীরা বিআরটিসি বাসে চড়েন। এতে তাদের বাসগুলো একবার আসা-যাওয়া করলে তেলের টাকাও থাকে না। গাড়ির আমদানি, শ্রমিক খরচ কোনোটাই ওঠে না। ফলে বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ করা প্রয়োজন।
ময়মনসিংহ জেলা মোটরযান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন চানু বলেন, বিআরটিসির ডাবল ডেকারের বাসগুলোর কারণে ব্যক্তিমালিকানার বাসগুলো ক্ষতির মুখে। সিঙ্গেল ডেকারের বাস চলাচলে আপত্তি নেই। ডাবল ডেকারের বাস চললে আবারও শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করবে।
বিআরটিসি ময়মনসিংহ বাস ডিপোর ম্যানেজার (অপরারেশন) জাফর আহম্মেদ বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন বাসগুলো আন্তঃজেলায় চলাচল করে থাকে। আর বিআরটিসি জেলার লোকাল সার্ভিস। এতে সাধারণ বাস মালিক বা শ্রমিকদের ক্ষতি হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু তারা অযৌক্তিকভাবে জনগণের বিপক্ষে গিয়ে জনপ্রিয় এই সরকারি পরিবহন সার্ভিস বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ঐ সড়কে বাস চলাচলের জন্য একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে শ্রমিকরা সেই সিদ্ধান্ত না মেনে সড়ক অবরোধ করে। বিষয়টি সমাধান করা হবে।
একুশে সংবাদ/ড.ব.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :