পণ্যদ্রব্য সহনীয় রাখতে ২৯টি পণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। গত ১৫ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বাজার সংযোগ শাখা-১ থেকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: মাসুদ করিমের স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করা হয়।
২৯টি পণ্যদ্রব্যের দাম নির্ধারণের ৪দিন পার হলেও রাজশাহীর বাজারে এর প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। এছাড়াও এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণসহ অন্যান্য দপ্তরকে বাজার তদারকি করতে তেমন দেখা যায়নি। ফলে বাড়তি দামেই ক্রয় করতে হচ্ছে এসব পণ্য।
এদিকে ব্যবাসায়ীরা পাইকরি বাজারে দাম না কমার অজুহাত দিয়ে আগের দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে বলে যুক্তি খাড়া করছেন। আর ক্রেতারা বলছেন, সরকারের নির্দেশ মানছেন না ব্যবসায়ীরা। দ্রুত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাজশাহী বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে ছোলা প্রতি কেজি ৯৮ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশনা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে। ১৩০ টাকার মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ৯৩ টাকার খেসারি ১৩০ টাকা, ১৬৫ টাকার মুগডাল ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জাইদি খেজুর ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। এ ছাড়া সাগর কলার হালি খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সেটিও বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা হালিতে। এ ছাড়া চিড়ার খুচরা দাম ৬০ টাকা, বেসন ১২১ টাকা বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। তবে চিড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা আর বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা দরে।
সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ও সিম ৫০ টাকা ও আলু সাড়ে ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৪ টাকা খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়, বেগুন ও সিম বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি।
এদিকে, বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬৪ টাকা। এছাড়া ছাগলের মাংসের দাম এক হাজার ৩ টাকা। তবে নির্ধারিত দামে মিলছে না বাজারে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি। খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায়।
ক্রেতা সাইফুল্লাহ বলেন, সরকার সব দাম কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। দাম বাড়লে সেটি সাথে সাথে বেড়ে যায়।
বাজার করতে আসা শিক্ষার্থী আফরিন বলেন , সরকার যদি বাজার মনিটরিং করে, তবে খুব দ্রুতই দাম আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। লোক দেখানো কিছু কাজ করে তারা বসে থাকে ফলে সবকিছু সহ্য করতে হয় সাধারণ মানুষকে।
মাংস ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, গরু কিনতে যে টাকা লাগে সেই অনুপাতে আমরা বিক্রি করছি। এতে কেজি প্রতি ১০ টাকা লাভ হলেই যথেষ্ট। এখানে গরুর দাম বেশী তাই সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
সরকার নির্ধারিত মাছের মধ্যে চাষের পাঙাশ মাছের খুচরা দাম ১৮১ টাকা ও কাতলা মাছের দাম সর্বোচ্চ ৩৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এসব মাছের কোনোটিই নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে।
ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা দাম বেধে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর তবে বাস্তবে এই দামে কোনো কিছুই মেলেনি। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০-৩২০ টাকায়। কেজি দরে।
রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদফতরের সহকারি পরিচালক আফরিন হোসেন বলেন, শনিবার থেকে এই দামে বিক্রি করতে বলা হয়েছে। রোববার সরকারি ছুটি ছিল। সোমবার থেকে আমরা অভিযানে নামবো। আমাদের সাথে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদফতরও থাকবে। যারা নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করছেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/আ.ব.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :