বরিশালের উজিরপুরে দখলের ‘উৎসব’ যেন শেষই হচ্ছে না। শত শত কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি এভাবেই দখল করে নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা।
গত শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার হারতা ইউনিয়নের হারতা বাজারের সেনের খালের একমাত্র ট্রলার ঘাটটি অবৈধভাবে দখল করে কাঠের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার মাঝেই রাত-দিন চলছে তাদের কাজ।
এ বিষয় হারতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, এ ঘাটটি শত শত বছর ধরে বাজারের পন্য আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বরিশালে সাদা মাছের সর্ববৃহৎ বাজার এই হারতা মাছ বাজার। উপজেলার জল্লা, ওটরা, সাতলা ও হারতা ইউনিয়নের শত শত ঘের ও বিল থেকে ধরা হাজার হাজার টন মাছ সেনের খালের মাধ্যমে হারতা উত্তর পাড় মাছ বাজারের ট্রলার ঘাটে আসে। এ ছাড়া এই ঘাট থেকে বাজারের কোটি কোটি টাকার মালামাল ওঠানামা করে। কিন্তু স্থানীয় ভূমিদস্যু খ্যাত গিয়াস ও রুবেল
মিলে প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে দু’টি চান্দিনা ভিটি লিজ নেন। পরে তারা হারতার খাবার হোটেল ব্যবসায়ী ওয়াহিদের কাছে ১৮ লাখ টাকায় তা বিক্রি করেন। ২০২২ সালের জুন মাসে ওয়াহিদ ঘাটলা দখল করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এতে বাজার কমিটিসহ স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েন ওয়াহিদ ভবন নির্মাণের কাজ স্থগিত করে দেন।
হারতা মৎস্য আড়ত সমিতির সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদ ইউপি সদস্য নরেন্দ্রনাথ বাড়ৈ, কৃষ্ণ ও ফারুক মিলে কিছুদিন আগে একটি কাঠের টল ঘর নির্মাণ করে। আমি বাধা দিলে কাজ স্থগিত করে।
সম্প্রতি ভূমিদস্যুরা হঠাৎ ট্রলার ঘাটটি দখল করে বিভিন্ন প্রকার ফল ও শাকসবজির দোকান বসিয়ে পুরো ঘাটটি নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। এ দিকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অমল মল্লিক দখলদারের কবল থেকে ঘাটটি পুনরুদ্ধার করতে জেলা প্রশাসক, উপজেলা সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি), উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
দখল বিষয়ে ওয়াহিদ বলেন, আমি গিয়াস ও রুবেল এর মাধ্যমে ১৮ লাখ টাকায় তাদের দু’টি চান্দিনা ভিটি দোকানের জমি কিনেছি। সেখানে ভবন তুলতে গেলে স্থানীয়দের বাধায় কাজ স্থগিত রাখি।
কাঠের টল ঘর নির্মাণ কারি ইউপি সদস্য নরেন্দ্রনাথ বাড়ৈ বলেন, মৎস্য আড়তে আষার সামনে সড়ক ছোট ছোট মাছ ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছে। যার জন্য হারতা -সাতলা সড়কে দুর্ঘটনা হয়। মৎস্য আড়ত সমিতির টাকা দিয়ে ছোট ছোট মাছ ব্যবসায়ীদের টল ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। ব্যক্তি স্বার্থে নয় জনগণের স্বার্থে।
কাঠের টল ঘর নির্মাণ কারি ইউপি সদস্য কৃষ্ণ বলেন, আমরা দখল করি নাই। ট্রলার ঘাট হবে। জনগণের সাথে টল ঘর হবে।
স্থানীয় এক শিক্ষক হরিমোহন দাস বলেন, বিল অঞ্চলের ধান, শাকসবজি ও মাছসহ কৃষিপণ্য এখানে উঠানামা হয়। কিন্তু উজিরপুর উপজেলা ভূমি অফিসের একদল অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে চান্দিনা ভিটির ডিসিআর কেটে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযুক্ত চান্দিনা ভিটি বিক্রিতা গিয়াস ও রুবেলর মোবাইলে একাধিক বার ফোন করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
হারতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অমল মল্লিক বলেন, জনস্বার্থে চান্দিনা ভিটি বাতিল করে ট্রলার ঘাট দখল মুক্ত করার দাবিতে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার জালাল আহমেদ বলেন, চান্দিনা ভিটি আমার পূর্ববর্তী কর্মকর্তারা দিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।
উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে. এম ইশমাম এর কাছে চান্দিনা ভিটি বাতিলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একমাত্র জেলা প্রশাসক বাতিল করতে পারেন। অবৈধভাবে কিছু হলে তদন্ত করে দেখা হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :