৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে আয়রন ব্রিজ নির্মাণ কাজে মরিচা পড়া লোহার পোস্ট বীম জোড়াতালি দিয়ে ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের সুলতানাবাদ- চন্দ্রপাড়া সড়কে চন্দ্রপাড়া খালের ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় আয়রন ব্রিজ নির্মাণ কাজে এমন অনিয়মের অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
সেতু নির্মাণে পুরাতন লোহার মালামাল জোড়াতালি এবং রং করে ব্যবহার করায় সেতু স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
উপজলো এলজিইডি সূত্র জানায়, দক্ষিণাঞ্চলে আয়রন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় চন্দ্রপাড়া খালে ২৭মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩.৭মিটার প্রস্তের সেতু নির্মাণের প্রকল্পে নেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৬২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৫০ টাকা। এ কাজটি পায় পটুয়াখালীর মেসার্স রোজা অ্যান্ড সাওম এন্টার প্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেন এলজিইডি।
চুক্তি অনুযায়ী মূল ঠিকাদার নির্মাণ কাজ করার কথা থাকলেও সাব ঠিকাদারের কাছে কাজটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সাব ঠিকাদার নির্মাণ কাজ তদারক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বিধিবহির্ভূত ভাবে নির্মাণ কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কাজে নিয়োজিত শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, ব্রিজ নির্মাণে পুরাতন লোহার বীম, পোস্ট ও অন্যান্য লোহার মালামালে রং মেখে ব্যবহার করছেন সাব-ঠিকাদার পৌর যুবলীগ সাধারন সম্পাদক অরবিন্দু দাস ও বাউফল দাসপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সবুজ তালুকদার। তারা এসব মালামাল বরিশালের ভাঙারি দোকান থেকে কিনে এনেছেন এবং মরিচাপড়া লোহার এসব বীম ও পোস্ট জোড়াতালি দিয়ে রং মেখে ব্রিজের কাজে ব্যবহার করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৬/৭জন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা পুরাতন লোহার পিলার মাটির নিচে কুপছেন। কোনো ধরনের যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে পিলার কুপছেন শ্রমিকেরা। এতে পুরাতন লোহা দিয়ে নির্মাণ কাজ ও শিডিউল অনুযায়ী কাজ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশ্ন উঠেছে ব্রিজের স্থায়ীত্ব নিয়ে।
নির্মাণ কাজের পাশে পথচারী চলাচল করতে কাঠের সেতু নির্মাণ করতে ৪৩ হাজার ৮১৩ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও নড়েবড়ে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে রেখেছেন সাব ঠিকাদার। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারীরা।
সুলতানাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ব্রিজ নির্মাণের নামে সরকারি বরাদ্দ লুটপাট চলছে। বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করতে পুরাতন মরিচা পড়া লোহার বীম এঙ্গেল ব্যবহার করা হচ্ছে। আরেক বাসিন্দা রাকিব বলেন, ব্রিজের কাজ যথাযথ ভাবে হচ্ছে না। এলজিইডির তদারকি না থাকায় সাব- ঠিকাদার ইচ্ছে স্বাধীনমত কাজ করছেন। ব্যবহার করছেন জরাজীর্ণ পুরাতন লোহা। যার কারণে ব্রিজ টেকসই হবে না, বাড়বে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি।
পুরাতন রড ব্যবহার ও নির্মাণ কাজে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে সাব ঠিকাদার সবুজ বলেন, আমি এ কাজের সাথে জড়িত না। অন্য আরেক সাব ঠিকাদার অরবিন্দু দাস বলেন, কাজ নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে। কোনো অনিয়ম হচ্ছে না।
তবে এবিষয়ে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোজা অ্যান্ড সাওম এন্টার প্রাইজের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নির্মাণ কাজ তদারক কর্মকর্তা ও উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী এবিএম হুমায়ন কবির বলেন, নুতন পোস্ট পাওয়া যায় না বিধায় পুরাতন পোস্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বাকি সব নতুন। বীমসহ অন্যান্য মালামালও পুরাতন ও রং করা কেনো তদারক কর্মকর্তাকে এমন প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
উপজলো এলজিইডি প্রকৌশলী মো. মানিক হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানান নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :