ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো বারি বেগুন-১২ জাতের বেগুন চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। এ জাতের বেগুন চাষে সফলতা অর্জন করেছেন কৃষক আলম বেপারী। শুধু তাই-না আকারে বড় হওয়ায় বেগুন দেখতে কৃষকের জমিতে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
দূর থেকে গাছ ও ফুল দেখতে অন্যান্য বেগুনের মত হলেও কাছে গিয়ে দেখলে মনে হয় এক একটি গাছে যেন ছোট ছোট লাউ ধরে আছে, এমনই একটি জাতের বেগুন চাষ করে এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি করেছেন ইউনিয়নের নরসিংহদিয়া এলাকার কৃষক আলম বেপারী।
আকারে বেশ বড় ও খেতে সুস্বাদু তার প্রতিটি বেগুনের ওজন প্রায় ৬০০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত। অনান্য বেগুনের চেয়ে এই জাতের বেগুন দামও বেশি। বাজারে বিক্রি করে ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষক। আলম বেপারীর এই বেগুন দেখে এজাতের বেগুন চাষে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন।
ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগের অঞ্চল প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম আহম্মেদ জানান,
খামার প্রদর্শনী বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) এর আওতায়, ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, (বিএআরআই) কতৃক বারি বেগুন-১২ উৎপাদন সহায়তা কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ফলন বৃদ্ধি ও জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে
কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের নরসিংহদিয়া এলাকায় আলম বেপারী নামে ১জন কৃষককে প্রথমবারের মতো প্রদর্শনীর মাধ্যমে বারি ১২ জাতের বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তাকে ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কৃষকের বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছি। বারি ১২ জাতের বেগুন চাষ করলে কৃষকরা অল্প জমিতে অনেক লাভ করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
কৃষক আলম বেপারী জানান, ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, (বিএআরআই) এর পরামর্শে এবং বৈজ্ঞানিক সহকারী হুমায়ুন কবির
এই জাতের বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি আমাকে বিনামূল্যে বীজ দিয়েছেন এবং প্রতিনিয়ত তিনি আমার বেগুন ক্ষেতের জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ নেই বলে জানান তিনি। আমি ৫০ শতক জমিতে এ জাতের বেগুনের চাষ করেছি। তার মধ্যে ২০ শতক জমি থেকে সাপ্তাহে ৮ থেকে ১০ মণ বেগুন তুলি। তিনি ২০ শতক বেগুনের ক্ষেত থেকে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয়ের আশা করছেন। আরো বলেন, আমার এই বেগুন ক্ষেত দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষক ও দর্শনার্থীরা আসছেন। যারা দেখছেন এই জাতের বেগুন চাষ করবেন বলে আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে সরেজমিন গবেষণা বিভাগের বৈজ্ঞানিক সহকারী হুমায়ুন কবির জানান, কৃষক আলম বেপারীকে বারি ১২ জাতের বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ করি। তাকে সরজমিন গবেষণা বিভাগের অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ দেয়া হয়। শুরু থেকেই তাকে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এখন বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করি আলম বেপারী বেগুন বিক্রি করে
অনেক লাভবান হবেন। তিনি আরও বলেন, আলম বেপারীর বেগুন চাষ দেখে এলাকার অনেকেই এ জাতের বেগুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
স্থানীয়রা জানান, জীবনে অনেক বেগুন দেখেছি, লাউয়ের মত এত বড় বেগুন এই প্রথম আমাদের এলাকায় দেখলাম।
বেগুনের বাম্পার ফলনে কৃষকের এক মাঠ দিবস অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গাজীপুর তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র,(বিএআরআই), এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প সমন্বয়ক ড. ফেরদৌসী বেগমকে বেগুন চাষী আলম বেপারীর ছেলে বারি ১২ জাতের বেগুন তুলে দেন। প্রধান অতিথি বেগুন চাষীকে বেগুন চাষে প্রশংসনীয় করেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :