কেউ করছেন ঝালাই আবার কেউ ব্যস্ত রংয়ের কাজে এ যেন পুরাতনকে নতুন করে গড়ে তোলার মহা উৎসব। বরিশাল নগরীর রূপতলীয়ও নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকার বর্তমানের চিত্র এটি। এখানে ফিটনেসবিহীন বাস গুলো ঢেলে সাজানো হচ্ছে। কাজের কারণে দম ফেলার ফূসরত নেই শ্রমিকদের।
মাত্র কদিন বাদেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের ছুটিতে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে আগমণ ঘটবে লাখ লাখ মানুষের। পদ্মা সেতুর বদৌলতে এবারও সড়ক পথে পরিবহনগুলোতে থাকবে বাড়তি চাপ।
তাই যাত্রীদের দৃষ্টি কাড়তে আগেভাগেই ফিটনেসবিহীন লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাসগুলো `ফিটফাট` করে তুলছেন পরিবহন মালিকরা। আর এই প্রস্তুতি শুরু হয় প্রথম রোজা থেকেই। লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাসগুলোকে ওয়ার্কশপে নিয়ে ঘষা-মাজা করে নতুন রূপ দেয়া হচ্ছে।
এই কর্মযজ্ঞ শেষ হবে আগামী ২৭ রমজানের মধ্যে। বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকার ওয়ার্কশপগুলোতে দেখা যায়, গত এক মাস ধরে পুরোদমে চলছে যানবাহন মেরামতের কাজ। আনফিট এসব বাসে `ফিট` তকমা লাগিয়ে ঈদ সার্ভিসে যুক্ত হতেই চলছে সাজসজ্জা এবং রং লাগানোর মহাযজ্ঞ। আর এই তালিকায় শুধু আঞ্চলিক নয়, রয়েছে দূরপাল্লার বাস।
বরিশাল নথুল্লাবাদ এলাকার রং মিস্ত্রি বোরহান খান জানান, `প্রতি বছর রোজার আগে বেড়ে যায় কাজের চাপ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রোজার শুরু থেকেই পুরানো গাড়ি মেরামত এবং রংয়ের কাজ শুরু করেছেন তিনি। বিএমএফ পরিবহনের ১৩টি এবং আঞ্চলিক রুটের সামি-সাদি পরিবহন কোম্পানির ৬টি বাস রংয়ের কাজ করেছেন তিনি। প্রতিটি বাস ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে রংয়ের কাজ করছেন।
অপরদিকে, বাসে মেরামতের কাজ করায় গত এক মাস ধরে বেকার সময় কাটাচ্ছেন চালক এবং হেলপাররা।
আরিফুর রহমান ইমন নামের এক যাত্রী জানান, রোজার মাসে কম থাকে যাত্রী চাপ। তাই বছর শেষে ঈদকে কেন্দ্র করে রোজার শুরুতেই মেরামতে পদ্মা সেতু চালুর পরে বরিশাল-ঢাকা রুটে বেড়েছে যাত্রী চাপ। সেই সাথে বেড়ে গেছে বাসের সংখ্যা। তবে ঘষা- মাজা করে নামানো বাসগুলোই হতে পারে ঈদ যাত্রায় দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
বরিশাল চরবাড়িয়া ইউনিয়নের আলম রায়হান নামের এক যুবক ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন তখন তিনি জানান, আমি জরুলী কাজের জন্য আজ ঢাকায় যাচ্ছি ৫ দিন পড়ে আবারও আমার নিজের জেলায় বরিশালে ফিরবো। তবে বাসে যাত্রা করতে অনেক ভয় করে কারণ বর্তমানে ঈদকে সাবনে রেখে জোড়া তালি দিয়ে আনফিট বাস গুলো আবারও মহাসড়কে চলাচলের প্রস্তুতি নিচ্চেন। যাতে করে অদক্ষ চালক আর এই সব বাস গুলোর কারণে বড় দুর্ঘটনার হওয়ার আশংকা থেকেই যাচ্ছে।
বরিশাল সচেতন নাগরিকদের সনাকের সভাপতি শাহ শাজেদা জানান,উৎসব এলে কোরবানির ঈদ রোজার ঈদ পূজা পার্বণ এলেই আমরা দেখতে পাই যে সড়কে ব্যাপক দুর্ঘটনা ঘটে এবং দুর্ঘটনার কারণগুলো যে অকেজ বাস গুলো আবাও রং সং করে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয় এবং সেই বাসগুলোতে যারা ড্রাইভ করে তারা হচ্ছে একেবারেই নতুন ড্রাইভার। যার কারনে দুর্ঘটনা আরও বেশি বেড়ে যায়। আমরা এটা প্রতিবছরই দেখে আসছি এবং আমরা প্রস্তাব রাখবো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ বছর যেনো এ বিষয়গুলোর প্রতি ব্যাপক মনিটরিং করেন এবং প্রশাসনের কাছ থেকে কঠোর নিদর্শনা আসে।
তিনি জানান, আমাদের দাবি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ফিটনেস বিহীন বাস চলাচল বন্ধের পাশাপাশি। মহাসড়কে তিন চাকার জান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বরিশাল বিআরটিএর পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান জানান, সড়কে ফিটনেসবিহীন বাস চলাচলের কোন সুযোগ নেই। যদি কেউ এমনটা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি জানান, আমাদের বিভাগীয় কমিশনার ডিআইজি ও বাস মালিক সমিতির সঙ্গে মিটিং হয়েছে। আমরা তাদের সকলকে বলেছি যাতে করে ফিটনেস বিহীন গাড়ি মহাসড়কে চলাচল না করতে পারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মালিক সমিতিরাও এ বিষয়ে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো: জিহাদুল কবির বলেন, মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে মিটিং হয়েছে। আমরা তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি। কোন বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার সুযোগ নেই। ফিটনেস বিহীন গাড়ি আমাদের এই মহাসড়কে কোন ভাবেই চলবে না। অদক্ষ চালক দিয়ে কেউ গাড়ি চালানোর সুযোগ নেই। এ বিষয়ে আমরা ভালোভাবেই মনিটরিং করতেছি। যদি ফিটনেসবিহীন কোন গাড়ি পাওয়া যায় তাহলে সাথে সাথেই গাড়ি আটক করা হবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন, ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ঢাকা থেকে অনেক মানুষ বরিশালে আসবে। বিশেষ করে এ সময় যাত্রীদের চাপ কেন্দ্র করে কোন ফিটনেসবিহীন গাড়ি। যে গাড়িগুলো যাত্রীদের জন্য নিরাপদ নয় এ ধরনের গাড়ি যেন মহাসড়কে চলাচল করতে না পারে সে জন্য আমাদের জেলা প্রশাসনের এক্সক্লুসিভ ম্যাজিস্ট্রেটের টিম কাজ করবে। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি নিরাপদ ঈদ যাত্রা দেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :