পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার কোটি মানুষ নাড়ির টানে বাড়িতে ছুটছেন। এবারের ঈদ যাত্রায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে। হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী গেল এক বছরে ১৩৫টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৩১ জনের।
এছাড়া মহাসড়কে অন্যান্য ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত দেড় হাজারের বেশি মানুষ। মূলত যানবাহনের মাত্রা অতিরিক্ত গতি, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও হেলমেটবিহীন দ্রুতগতির মোটরসাইকেল চলাচলসহ নিয়মিত ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে মানুষের অনীহার কারণেই উদ্বেগ জনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এই দূর্ঘটনা। জানিয়েছেন সড়ক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে ঈদ যাত্রায় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে বাড়তি নজরদারি বৃদ্ধি করেছে আইন শৃংখলাবাহিনী।সরজমিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে স্পিডগানের মাধ্যমে যানবাহনের গতি মনিটরিং করছে হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশ।
এছাড়া ঈদ যাত্রায় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাসহ সড়কে চুরি, ছিনতাইয়ের মত ঘটনা এড়াতে একাধিক স্থানে সিসিটিভি স্থাপন করে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায় স্পিডগান ব্যবহার করে নিয়মিত মামলা দিয়েও নিয়ন্ত্রণে আসছেনা পরিস্থিতি। ফলে আসন্ন ঈদুল ফিতরে লাখো মানুষের ঈদ যাত্রা নিরাপদ করতে এক্সপ্রেসওয়েতে ৬টি পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে থাকবে পুলিশ।
হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশের তথ্য ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ২০২৩ সালের মার্চ থেকে চলতি বছর ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত গত এক বছরে ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার মহাসড়কে ১৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৩১ জন মানুষের। এর মধ্যে ঢাকা-মাওয়া ৩২ কিলোমিটার অংশে ৭২টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬৪ জন। আর গুরুতর আহত হয়েছে ৭৮ জন। এসব দুর্ঘটনায় মামলা হয়েছে ৫৭টি এবং জিডি ১৫টি। অন্যদিকে জাজিরা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার অংশে ৬৩টি দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নিহত হয়েছে আর গুরুতর আহত হয়েছে ৯৪ জন। এসব দুর্ঘটনায় মামলা হয়েছে ৫৭টি এবং জিডি ১৫ টি।
এদিকে এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়মিত এমন দুর্ঘটনায় এবারও ঈদ যাত্রায় আতঙ্ক বেড়েছে এই পথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের। অনেকের অভিযোগ শৃঙ্খলা মেনে যানবাহন না চলানোয় বৃদ্ধি পাচ্ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা।
দ্রুত গতিতে ও নিয়ম না মানা যানবাহন চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ জানান সাধারণ যাত্রীগন। যাত্রীবাহী বাস চালকদের ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে বললে কিংবা ওভার ট্রেকিং করতে বাঁধা দিলে চড়াও হয় সাধারন যাত্রীদের উপর। এসব বিষয়ে আমরা একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযোগ করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। এসব কথা জানালেন এই রুটে চলাচলকারী কয়েকজন যাত্রী। প্রতিবছর ঈদের সময় মহাসড়কে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটে এতে স্বজনহারা হয় বিভিন্ন মানুষ। প্রশাসনের উচিত এইসব বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। তাহলে ঈদ যাত্রাটা মানুষের নিরাপদ হবে।
ঈদের আগে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব/অনুরোধ জানিয়ে হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাঞ্চন কুমার সিংহ। তিনি বলেন, ঈদে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয় সবচেয়ে বেশি মহাসড়কে মোটরসাইকেল এলোমেলো চলাচলের কারণে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। যদি ঈদের সময়টুকু মূল সড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রেখে। এবং পাশে থাকা সার্ভিস লাইনে চলাচল করতে বাধ্য করা হয় তাহলে দুর্ঘটনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, এবার ঈদ যাত্রায় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় এড়াতে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানে থাকবে হাইওয়ে পুলিশ। মহাসড়কে নির্ধারিত যে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগ রয়েছে যদি কোন যানবাহন এটি অতিক্রম করে তাহলে তাৎক্ষণিক মামলা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মোটরসাইকেলের গতি ও হেলমেট বিহীন চালকদের কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও চেষ্টা থাকবে যাতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে। এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে নিয়মিত। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিভিন্নভাবে মনিটরিং করা হলেও যানবাহন চালকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি না হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খেতে হচ্ছে। সবশেষ গেল মার্চ মাসেও বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে যেটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
এদিকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার ঈদে ঘর মুখে মানুষের চাপ প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুতে। ফলে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জোড়ালো তদারকির তাগিদ দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।
পুলিশ সুপার আসলাম খাঁন বলেন, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মহাসড়কে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ও যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সাদা পোশাকেসহ প্রায় দুই শতাধিকের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য পদ্মা সেতুর পাশে আলাদা লেন তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েতেসহ চলমান সব সমস্যার কথা বিবেচনা করে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
এ দিকে জেলা প্রশাসক আবু জাফর রিপন বলেন, ঢাকা ভাঙ্গা ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের অংশে ঈদে যাত্রীদের নিরাপত্তা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু উত্তর থানা কর্তৃপক্ষসহ হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়োজিত আছে। একই সাথে জেলা গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা মহাসড়কে চুরি ছিনতাই বন্ধে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। এটি ঈদের ছুটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহ থাকবে। যদি কোন চালক আইন অমান্য করে তাৎক্ষণিক মামলা দেয়াসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একাধিক বিভিন্ন পয়েন্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। আশা রাখি এবারের ঈদ যাত্রায় রাজধানী ছেড়ে যারা পদ্মা সেতু হয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন তারা নিরাপদে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে পারবেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :