প্রতিদিন বিকেল হলেই ইফতারি নিয়ে ছুটছেন একঝাঁক তরুণ-তরুণী । শুরুটা সেই পহেল রমজান। এখনো চলছে তাদের ছুটে চলা। যেন ক্লান্তি নেই। কখনো তাদের দেখা মেলে রংপুর স্টেশনে, শাপলা চত্বর, চারতলা মোড়,রেলগেট, রংপুর কেডিসি, সুলতান মোড়, খামাড় মোড়, ঘোড়াপীর, শাপলা চত্ত্বর আবার কখনো পীরপুর, পায়রা চত্ত্বর, কামার পাড়া, লালাবাগ, দর্শনা, সাতমাথা, শপিং কমপ্লেক্সের নিচে, ঘোড়াপীর মাজার। এভাবেই ৪০ জন তরুণ-তরুণী চষে বেরিয়েছেন রংপুর শহরের একমাথা থেকে আরেক মাথা। তারা সবাই সেচ্ছাসেবী সংগঠন "স্টেপ আপ ফর টুমরো" এর ভালান্টিয়ার।
সেচ্ছাসেবীরা প্রতিদিন ইফতারি তুলে দিয়েছেন দুঃস্থ মানুষের হাতে, যারা রাস্তার পাশের বস্তিতে কিংবা স্টেশনে থাকে কিন্তু নেই মাথা গোজার ঠাই । প্রতিদিনের ইফতার আইটেমে ছিল খিচুড়ি কিংবা মুড়ি, খেজুর, পিয়াজু,বেগুনী, ছোলা, বুন্দিয়া, এবং বাহারি ফল। শুধু ইফতার বিতরণই নয়, মাঝ রাতে সেহেরীর জন্য নিজেদের হাতে রান্না করা খাবার নিয়েও ছুটেছেন রংপুর রেল স্টেশনে দুঃস্থ মানুষের কাছে। এভাবে নিজেদের অর্থায়নে রমজানজুড়ে দেড় হাজার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে "স্টেপ আপ ফর টুমরো"।
"ওজা(রোজা) থোও না খায়া।কায়ো নাই দেখার হামার গুলাক। আল্লায় তোমার গুলার ভালো করুক বাবা।" স্টেশনে অবস্থানরত একজন বৃদ্ধা ইফতার পাওয়ার পর এইভাবে তার অনুভূতির কথা জানান ।
তবে কাজের শুরুটা ছিল অনেক চ্যালেঞ্জের। আর্থিক সহায়তার বেশীরভাগ অংশই এসেছে ভলান্টিয়ারদের থেকে। তারা স্বেচ্ছায় এ অর্থ দিয়েছেন। তাদের পরিবার কিংবা আত্মীয় স্বজনদের সহযোগীতায় একেকটি দিনের অর্থের যোগান হয়েছে । কারো টিউশনির টাকা, কারো জমানো সঞ্চয় আবার কারো হাত খরচের টাকা দিয়েছেন ভলান্টিয়াররা ।
‘স্টেপ আপ ফর টুমরো’র ভলান্টিয়ার রংপুর সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রুহান বলেন, "এসব কাজের পেছনে জ্বালানি দেয় আত্মিক প্রশান্তি। জীবনে পড়ালেখা করে বড় হলাম কিন্তু দেশ ও দশের কাজে আসলাম না এটা মানুষ হিসেবে লজ্জাজনক। জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।"
২০২৩ সালের শেষের দিকে জলবায়ু পরিবর্তন ও জলবায়ু ন্যায্যতা,মানসিক স্বাস্থ্য,নারী ও শিশু অধিকার সুরক্ষা এবং ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট– চারটি লক্ষ্য নিয়ে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) বিবিএ’র শিক্ষার্থী মুবাশ্বিরা তাসনীমের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ‘স্টেপ আপ ফর টুমরো’ । বর্তমানে রংপুর সহ কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও ঢাকা জেলায় কাজ করছে দেড় শতাধিক ভলান্টিয়ার । ইউনিসেফ ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের যৌথ কোলাবরেশনেও নানা সেচ্ছাসেবী কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি ।
‘স্টেপ আপ ফর টুমরো’ এর প্রতিষ্ঠাতা মুবাশ্বিরা তাসনীম তার স্বপ্নের কথা জানিয়ে বলেন, ‘বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে কাজ করে যাচ্ছি। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয় দায়ি কিন্তু তার ভুক্তভোগী হচ্ছে আমাদের মতো দেশগুলো । বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ভুক্তভোগী । জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের অধিকার আদায় এবং যুবদের সঙ্গে নিয়ে নারী ও শিশু অধিকার সুরক্ষার মধ্য দিয়ে এক শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়েই প্রতিদিন ঘুমাতে যাই । মাসব্যাপী ইফতার কার্যক্রম সুবিধাবঞ্ছিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোরই এক প্রচেষ্টা।‘
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :