নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের দুটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ করে যে গাড়িতে তোলা হয় সেটি তার প্রতিদ্বন্দ্বী লুৎফর হাবীব রুবেলের।
লুৎফুল হাবীব তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদের শ্যালক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
সোমবারের (১৫ এপ্রিল) ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে। এসময় নির্বাচন কার্যালয়ের নিচতলায় সিঁড়ির নিচে একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অপহরণ কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে আরও কয়েকজনকে। দেলোয়ার হোসেন যখন নির্বাচন কার্যালয় থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন ৮ থেকে ১০ জন দৌড়ে গিয়ে কার্যালয়ের গেটে ঢুকে দেলোয়ার হোসেনকে ঝাপটে ধরেন। একপর্যায়ে তারা তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসেন। মারধর করতে করতে তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান, অপহরণে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি দেলোয়ার হোসেনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফর হাবীব রুবেলের। লুৎফুল হাবীবের ব্যক্তিগত সহকারী জাহিদ হাসানকে সাদা গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট পরে অপহরণে অংশ নিতে দেখা যায়। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া নাজমুল হক বাবু, শেরকোল ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি সানোয়ার হোসেনকেও সেখানে দেখা যায়।
এছাড়া লুৎফুল হাবীবের গাড়িচালক সুজনকে কালো গেঞ্জি পরে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত কালো মাইক্রোবাসের চালকের আসনে বসতে দেখা যায়। পরে তিনিই মাইক্রোবাসটি চালিয়ে নিয়ে যান।
তবে নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম বলেন, মাইক্রোবাসটি আটক করতে অভিযান চলছে। পাশাপাশি মাইক্রোবাসটির নম্বর বিআরটিএকে দেয়া হয়েছে। প্রকৃত মালিককে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, এই ঘটনায় দেলোয়ারের ভাই মজিবুর রহমান বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় অজ্ঞাতদের অভিযুক্ত করে সোমবার রাতে মামলা করেন। অপহরণের সঙ্গে জড়িত সিংড়া উপজেলার হারোবাড়িয়া এলাকার নাজমুল হক বাবু ও কৃষ্ণপুর এলাকার সুমনকে গ্রেফতার করা হয়।
তবে দেলোয়ারের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক লুৎফর হাবীব রুবেল দাবি করেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাওয়া কালো মাইক্রোবাসটি তার না। তার মাইক্রোবাসটি সোমবার ভাড়ায় গিয়েছিল। কোথায় ভাড়ায় গিয়েছিল তিনি তা জানেন না। রুবেলের ঘনিষ্ঠ সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসান ইমামের নেতৃত্বে এই অপহরণের অভিযোগ উঠলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।
জেলা নির্বাচন অফিস থেকে প্রার্থীকে তুলে নিয়ে গেলেও বিষয়টি নির্বাচন কর্মকর্তাদের কিছু করার নেই বলে জানান জেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর বৈধ প্রার্থী হলে তারা উদ্যোগ নেবেন।
প্রার্থীকে অপহরণের পর নিজ কার্যালয়ের সামনে থাকা মাইক্রোবাসে তোলার ঘটনায় নড়ে চড়ে বসেছেন জেলা প্রশাসক। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকালে পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকের বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞাঁ বলেন, আইন অনুযায়ী সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :