চালকের লাইসেন্স ও কাগজপত্রবিহীন কোনো গাড়ি ফরিদপুরে ঢুকতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। এছাড়া জেলার সব মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযান শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এজন্য সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা কামনা করেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘সড়ক দুর্ঘটনা নিরাপত্তা কমিটির সভায়’ এসব কথা জানান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ঈদের আগে সড়কে যে স্বস্তিদায়ক অবস্থা ছিল, ঈদের পরে বড় দুটি সড়ক দুর্ঘটনা পুরো মন্ত্রণালয়কে কাঁপিয়ে দিয়েছে। যার কারণে তারা খুবই অস্বস্তিতে আছেন এবং আমাদের ওপরই চাপ এসে পড়েছে। প্রত্যেকটি দুর্ঘটনার পেছনেই স্বল্পগতির গাড়ির একটা ভূমিকা থাকেই। আমরা দ্রুত এই গাড়িগুলো বন্ধ করব।’
চালক সুস্থ ছাড়া গাড়িতে ওঠা যাবে না উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেখানেই মোবাইল কোর্ট নিয়ে যাব সেখানে একজন চিকিৎসক থাকবে। সঙ্গে ডোপ টেস্ট, ডায়াবেটিস মাপার কিট এবং পেশার মাপার যন্ত্র নিয়ে যাব। গাড়ি থামিয়ে চালকের প্রেসার, ডায়াবেটিস ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হবে। সুস্থ ছাড়া গাড়িতে ওঠা যাবে না, এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। প্রেসার নিয়ে চালককে গাড়ি চালাতে দেয়া যাবে না।’
কাগজপত্র ও ফিটনেসবিহীন কোনো গাড়ি ফরিদপুরে ঢুকতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা সারাদেশে বার্তা দিতে চাই, ফরিদপুর পার হতে হলে চালকের ও গাড়ির ফিটনেস থাকতে হবে। সেই সঙ্গে প্রেসার ও ডোপ টেস্ট করতে হবে। এগুলো করে ফরিদপুর হয়ে যেতে হবে। অন্যথায় প্রবেশ করতে পারবে না। আর নয় আমরা গাড়ি ডাম্পিং করে ফেলব।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সোহাগ, হানিফ, ইউনিক পরিবহনের অধিকাংশ বাসের কাগজপত্র নেই, মাত্র ২৫ শতাংশ গাড়ির কাগজপত্র আছে। এই কাগজপত্রবিহীন গাড়িগুলো ফরিদপুর দিয়ে চলবে না, সোজা কথা। এজন্য যাত্রীরা ভুগতে পারে। জীবিকার জন্য আমরা জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলব না। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কিছুটা অমানবিক ও কঠোর হতে হবে, আইন প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায় সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।’
কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘ফরিদপুরের মহাসড়কে কোনো থ্রি-হুইলার চলবে না। এজন্য লোকাল বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এগুলো বাস্তবায়নে শিগগিরই আমরা কঠোর অভিযানে নামব। কারণ, জীবিকার আগে জীবন, এ জীবনের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আগামী সপ্তাহ তাদের সময় দেয়া হবে, এরপর অভিযানে নামব।’
এ সময় ফরিদপুরের দুটি মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিশাদ আলোচনা করা হয়। তাতে অবিলম্বে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের দাবি জানায় বাস ও ট্রাক মালিক সমিতি। এছাড়া সড়কে নিয়ন্ত্রিত স্পিড, খানাখন্দ ভরাটসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
চারটি কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করে বলেন, ওভার লোড, ওভার স্পিড, ওভার কনফিডেন্স এবং ওভার ওয়েটের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। এ চারটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। এছাড়া সরকারের কাছে প্রতিটি গাড়িতে কিউআর কোড বিশিষ্ট ডিভাইস বসানোর প্রস্তাব পাঠানো হবে। সেখানে গাড়ির লাইসেন্স, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ সমস্ত তথ্য থাকবে। যাতে যাত্রী গাড়িতে ওঠার আগে সেই গাড়ির ফিটনেস সম্পর্কে জানতে পারে। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে ৭৫ শতাংশ গাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে। তারা কাগজপত্র ঠিক করে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামবে।’
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম, মাদারীপুর রিজিয়নের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মো. শাহিনুর আলম খান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান ফারহান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর তুহিন লস্কর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সোহেল শেখসহ জেলা বাস ও ট্রাক মালিক সমিতির নেতারা।
গত ১৬ এপ্রিল সকালে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলা দিকনগর এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত হয়। এ দুর্ঘটনার পর জেলাজুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। কী কারণে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। সড়কে এ দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসক নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান সভায়।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :