ফরিদপুর জেলা জুড়ে চলছে প্রচন্ড গরম। এর মধ্যে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। গরমের সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিংও। গরম আর লোডশেডিংয়ে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা।
জানা যায়, ঈদ ও নববর্ষের জন্য টানা ৬ দিন ছুটি থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা সীমা অতিক্রম করেনি। চাহিদা কম থাকায় উৎপাদনও কম করতে হয়েছে। তারপরও জেলার বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হয়েছে বলে জানা গেছে। গরম বাড়তে থাকায় এবং চলতি সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত কলকারখানা ও অফিস আদালত খোলার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ফরিদপুরে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় বিভিন্ন এলাকায় খোঁজে নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুরে এক সপ্তাহ টানা তাপপ্রবাহে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র গরমে ঘরের বাইরে যেমন স্বস্তি মিলছে না, তেমনই বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে ঘরেও টেকা যাচ্ছে না। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
বোয়ালমারী উপজেলার সামনে থেকে কথা হয় রুস্তম মোল্লার সাথে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিলের টাকাতো আমরা কম দেয় না। যা বিল আসে তাই দিয়ে মেটাতে হয়। কোনও যাচাই করার পদ্ধতিও নেই। তা সত্ত্বেও প্রতি দিন এমন কষ্ট কেন সইতে হবে? একে এত গরম, আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। আমার এক সন্তানের বয়স মাত্র দুই বছর। সে আবার অসুস্থ। প্রতিদিন রাতে তার ঘুম ভেঙে যাচ্ছে লোডশেডিং এর কারনে।
জেলার মধুখালি উপজেলার বাসিন্দা আরিফুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। ঈদের পর থেকে দিনে-রাতে চার পাঁচ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করলেও সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে। তখন ঘন ঘন বিদ্যুৎ লোডশেডিং হয়। প্রতিবারে প্রায় এক ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে।
মাজকান্দি বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে অটো চালক মোসলেম উদ্দিন বলেন, কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড গরম পড়েছে। গরমের কারণে অটোভ্যান চালানো অনেক কষ্ট হচ্ছে। আবার অতিরিক্ত গরমের কারণে লোকজন বাইরে কম বের হচ্ছে। ফলে খুব একটা যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এতে আমাদের আয় রোজগার কমে গেছে।
কৃষি জমিতে কাজ করার সময় চাষি জাফর সেখ বলেন, এই গরমে আমরা জমিতে কাজ করতে পারছি না। অনেক কষ্ট হচ্ছে। খুব সকালে বের হয়ে কোন রকমে কাজ করে আবার ১২টার মধ্যে কাজ শেষ করতে হচ্ছে। নয়তো রোদের তাপ আরো বেশি হওয়ায় মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না। ফসলে বার বার সেচ দিতে হচ্ছে। এতে আমাদের খরচও বেশি হচ্ছে। আবার গরমের কারণে লেবারও পাওয়া যাচ্ছে না। কাজ না করলে আমরা ফসল কিভাবে পাবো। কিভাবে আমাদের পরিবার চালাবো।
কৃষক এনামুল হক বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় গরমে মাঠগুলো শুকে ফেটে গেছে। পানির অভাবে মাঠে চাষ করতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে গভীর নলকূপের সাহায্যে সেচ মাধ্যমে রোপা আমন ধানের চারা রোপণ শুরু করেছি।ইলেকট্রনিক দোকান মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতকয়েক দিনে ফ্যান বিক্রি বেড়েছে । এর কারণ মুল হচ্ছে এই জেলায় প্রচন্ড গরম বয়ে যাচ্ছে।
সাংবাদিক কামরুল সিকদার বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। বিশেষ করে দুপুরের পর আগুনঝরা রোদের তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। চলমান দাবদাহে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছে খেটেখাওয়া দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালক ও কৃষকরা। তীব্র রোদে মাঠে টিকতে পারছে না কৃষক ও দিনমজুররা।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :