শুষ্ক মৌসুমে খুলনা অঞ্চলের খাল বিল পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়। অন্য বছরগুলোতে এই সময়ে এসে পানির আধারগুলোতে একটু পানি থাকলেও চলতি বছরের খরতাপে সেই পানিও বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে। নেই বৃষ্টির দেখাও। ফলে প্রতিদিনই যেন একটু একটু করে বেড়ে চলেছে তাপমাত্রা। সেই খরতাপ শোষণ করার মতো পর্যাপ্ত পানি খুলনার খাল আর পুকুরগুলোতে না থাকায় তাপের তীব্রতাও অসহনীয় হয়ে পড়েছে।
পানির আধারগুলোতে পানি না থাকায় ভূগর্ভের পানির স্তর এমন পর্যায়ে নেমে গেছে যে, ৭০০ থেকে ৮০০ ফিট গভীরতার নলকূপগুলোতেও এখন আর পানি উঠছে না। ফলে খুলনা মহানগরীজুড়ে শুরু হয়েছে পানির জন্য হাহাকার।
খুলনা ওয়াসার হিসাব অনুযায়ী, ১৬ লাখ নগরবাসীর জন্য প্রতিদিন প্রায় ২৪ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন। যার অর্ধেক পানি সরবরাহ করতে সক্ষম এই সংস্থাটি। অন্যান্য মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ কোটি লিটার পানির সংস্থান হচ্ছে। তবে এর মধ্যে পান করার পানি সরবরাহ হচ্ছে ৩-৪ কোটি লিটার। যা পানযোগ্য পানির অর্ধেকেরও কম।
ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, ভূগর্ভ থেকে এখন ৪২টি পাম্পের মাধ্যমে প্রতিদিন ওয়াসা তুলছে ২ কোটি লিটার পানি। আর নগরবাসী বছরের প্রায় ১০ মাস ওয়াসার মালিকানাধীন প্রায় ৯ হাজার ৬০০ নলকূপ দিয়ে ২ কোটি লিটার এবং ব্যক্তিগত ১৪ হাজার নলকূপ ও সাধারণ পাম্প দিয়ে তোলে প্রায় ৩ কোটি লিটার পানি।
এছাড়া ওয়াসার মেগাপ্রকল্প ‘পানি সরবরাহ প্রকল্প’ থেকে দিনে মাত্র ৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ কোটি লিটার। যা চাহিদার অর্ধেক। বাকি পানির চাহিদা মেটাতে নগরবাসীকে প্রতিদিনই হীমসীম খেতে হচ্ছে।
নগরীর জিন্না রোডের বাসিন্দা হাসান বলেন, নগরীতে যে পরিমাণ পানির চাহিদা রয়েছে তা সরবরাহ করতে পারছে না খুলনা ওয়াসা। শুরুতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলেছিল ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করবে তা পানযোগ্য। কিন্তু সেই পানিতেই এখন প্রতিনিয়ত পাওয়া যাচ্ছে ময়লা আর দুর্গন্ধ। পান করাতো দূরের কথা, গোসলসহ অন্যান্য কাজ করাও কঠিন হয়ে পড়ে মাঝে মাঝে।
নগরীর নিরালা এলাকার ছামাদ বলেন, প্রতি বছরই পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বাড়িতে সাবমার্সেবল বসিয়েও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নতুন করে আবারো নলকূপ বসিয়েছি। তা থেকে আশপাশের মানুষকে দুই বেলা পানি দিই।
খুলনা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, নগরীতে পানির আধার অনেক কমে গেছে। এখন নগরীতে পুকুর খুঁজে পাওয়া কঠিন ব্যাপার। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে খুলনায় আরও বেশি পুকুর আর খালের প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ বলেন, নগরীতে দিনব্যাপী ৪২-৪৩টি উত্তোলক পাম্প দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয়। এতে তাদের ব্যয় একটু কম হয়। আর মধুমতী নদীর পানি পরিশোধন করে সরবরাহে ব্যয় অনেক বেশি। তাই ব্যয় কমাতে ভূগর্ভের পানি তোলা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
একুশে সংবাদ/জা. নি./ এসএডি
আপনার মতামত লিখুন :