মাস দেড়েক আগে সোনালী আঁশ পাট বীজ বপণ করেন কৃষকেরা। এরপর থেকে আর বৃষ্টির দেখা মিলছে না। কৃষকরা পানির জন্য হাঁহাঁকার করছেন। এমন অবস্থায় তীব্র খরার তাপদাহে নুয়ে পড়ছে তাদের ক্ষেতের পাট। অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিন দিয়েও ঠিকমতো সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে অতিরিক্ত খরায় ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে আছে।
পাট উৎপাদনে দেশসেরা ফরিদপুরের সালথা উপজেলার চিত্র এটি। তাই দুর্ভাবনা জেঁকে বসেছে এখানকার কৃষকদের মনে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট আবাদ হয়ে থাকে সালথায়। এবারও সালথা ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে।
দেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরি ফসলেই ফরিদপুর জেলার ব্যান্ডিং- সোনালী আঁশে ভরপুর ভালবাসি ফরিদপুর। তবে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সেই ভালবাসার ফসল নষ্ট হলে শুধু কৃষকেরই নয়, কৃষিখাতেরও ক্ষতি বয়ে আনবে। যা দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ওপরেও নেচিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই চলমান তাপদাহের দুশ্চিন্তায় এখন কৃষকের থেকে বিস্তার পাচ্ছে আরো অনেকের মনে। সরেজমিনে মাঠ পর্যায়ে ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে কৃষিবিভাগ বলছে, এই খরায় পাটের ওপর প্রভাব পড়বে না।
গত বৃহস্পতিবার সালথার গট্টি ইউনিয়নের জয়ঝাপ গ্রামের পাটচাষি দবির হোসেন বলেন, এবার পাটচাষ করে চরম সমস্যায় আছি। তীব্র দাবদাহে দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। পাটক্ষেতে সেচ দিতে গিয়ে ডিজেল কিনে কৃষকদের বেহা অবস্থা। তাহলে আমাদের বুক সমান পাটের চারা বেড়ে ওঠতো। সেইসাথে মাঠের পর মাঠ পাটের পাতা সবুজে ছেয়ে যেত। হারুন শেখ নামে আরেক পাটচাষি বলেন, বৃষ্টি তো নেই। পাতালও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। শ্যালো মেশিন দিয়ে মাটির নিচ থেকেও পানি ওঠিয়ে সেচ দিতে গিয়ে অনেক সময় ব্যর্থ হই। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব।
সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার বলেন, সালথায় এবারও প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাটের তেমন ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। তীব্র খরায় পাট গাছগুলো ধীরগতিতে বেড়ে ওঠছে। তবে আরও এক সপ্তাহ পরেও যদি বৃষ্টি নামে, তাহলে মাত্র ৭-৮ দিনেই পাটগাছ মানুষ সমান বেড়ে ওঠবে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পাট খরা সহনশীল ফসল। তবে পাটের ভাল ফলন নির্ভর করে বৃষ্টির ওপরেই। চলামান খরার মধ্যে যেসব পাটের গাছ বড় হয়ে গেছে, সেগুলোর কোনো সমস্যা হবে না। খরায় ছোট পাটগাছের সামান্য সমস্যা হলেও বৃষ্টির পানি পেলে ঠিক হয়ে যাবে। যদিও পাটগাছ ধীরগতিতে বেড়ে ওঠায় কৃষকরা চিন্তিত। তবে কোনো ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না। তিনি আরও বলেন, জেলাব্যাপী মাঠে কাজ করছে আমাদের টিম। ভাল মানের পাট উৎপাদনের লক্ষে সব সময় কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :