তীব্র দাবদাহে মাঠে ধান কাটছে কৃষক পাশাপাশি বিলে মাছ ধরছে জেলেরা। রোদে কাজ করতে করতে যখন কৃষক ও জেলেরা ক্লান্ত তখন সড়ক ও বিলের পাশের সাড়ি সাড়ি গাছের ছায়াতে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। কিন্তু জেলে, কৃষক বা পথিকরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেও এখন থেকে আর এসব গাছের ছায়া পাবে না। কারণ গাছগুলো কেটে ফেলছে বন বিভাগ।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল। এই বিলে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা সান্দিড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে। এ রাস্তার ধারে রয়েছে সারি সারি বনজ গাছ। যে গাছগুলো কেটে ফেলছে বনবিভাগ। আর এতেই চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়সহ ভ্রমণ পিপাসুদের মাঝে। বিলের পাড় ও রাস্তার পাশের এসব গাছ ছায়া দিয়ে যাচ্ছে প্রায় ২০ বছর ধরে। সড়কে ছায়া দেওয়া এসব গাছ কাটার বিরোধিতা করছে স্থানীয়রা। কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়ম মাফিক এসব গাছ কাটা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া গ্রাম থেকে রক্তদহ বিল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটারের বেশি সড়কের পাশ ও বিল পাড় দিয়ে প্রায় ১২শ গাছ কাটার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কাটা হয়েছে প্রায় চার থেকে পাঁচশতটি গাছ। গাছগুলোর বেশিরভাগই বনজ গাছ।
স্থানীয় বাসিন্দা আছর আলী নামের এক কৃষক বলেন, বন বিভাগ থেকে গাছ কাটছে কাটুক তবে দেখে শুনে বেশি বয়সী গাছ ও মারা যাওয়া গাছ কাটুক। আবার নতুন নতুন গাছ লাগাবে। তবে একবারে সব গাছ কাটায় আমাদের কৃষকদের অসুবিধা আবার এই গরমে গাছের ছায়া ও বাতাসে আমরা স্বস্তি পেতাম।
সান্দিড়া গ্রামের জেলে কাদের আলী বলেন, এখানে সরকারি গাছগুলো সব কাটা হচ্ছে তবে কোনো গাছ লাগানো হচ্ছে না। আদৌ এখানে কোনো গাছ লাগানো হবে কিনা তার ঠিক নেই। এই গাছগুলো কাটায় আমাদের সব পেশার লোকদেরই অসুবিধা হচ্ছে। এই বিল ও বিলের আশেপাশে প্রায় কয়েকশ কৃষক, জেলে প্রতিদিন কাজ করে। যারা এই সড়কের পাশে গাছের ছায়ায় এসে একটু বিশ্রাম নেয়। গাছ কাটার ফলে রোদের কারণে আমাদের কাজ করতেও অসুবিধা হচ্ছে।
তাহমিদ নাফিস দিপ্ত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গাছ আমাদের পরিবেশের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ এটি আমাদের সকলেরই জানা। সান্তাহারের সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে একটি এই রক্তদহ বিল পাড়। তীব্র গরমেও এখানে ছায়া, বাতাস থাকতো সামনে অথৈ পানি। আর এই সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায় সড়ক ও বিল পাড়ের গাছের কারণে। সেখানে সব গাছ কেটে ফেলে এই এই সৌন্দর্য নষ্ট করছে বন বিভাগ।
এ বিষয়ে আদমদীঘি বন বিভাগের ফরেস্টার মতিউর রহমান বলেন, সমিতির নিয়ম অনুয়ায়ী প্রতি ১০ বছর পর পর গাছগুলো কেটে ফেলতে হবে। এবং নতুন করে আবার গাছ লাগাতে হবে। তবে এই গাছগুলো ২০ বছর আগের যার কারণে গাছগুলো রাখার আর সুযোগ নেই। আমারা গাছগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে কাটছি। পরবর্তীতে আমরা আবারও এই সড়কের পাশ দিয়ে গাছ রোপণ করবো।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :