গতকালের পর আজও যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। অব্যাহত তাপমাত্রায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে রয়েছে তৃষ্ণার্ত শ্রমজীবী মানুষের জন্যে শরবত, স্যালাইন পানি ও ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা।
বুধবার (১ মে) যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘আজ পহেলা মে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা জেলাতেও একই তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এর আগে, মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) যশোরে সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়।’
এদিকে, অব্যাহত তাপমাত্রায় যশোরের সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। শ্রমজীবী মানুষ বিশেষ করে রিকশা-ভ্যানচালকেরা সকালের দিকে কাজে বের হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপ থেকে রক্ষা পেতে ছায়াতে বিশ্রাম খোঁজেন।
যশোর সদরের সুজলপুর এলাকার ভ্যানচালক শিবু দাস বলেন, সকাল ৯টার দিকে ভ্যান নিয়ে বের হয়েছি। সাড়ে তিনশ টাকা আয় হলেও নিজের জন্যে খরচ করেছি ৫০ টাকা। দিনশেষে মহাজনকে দিতে হয় আড়াইশ টাকা। রোদের ঝাঁজ বেশি বিধায় দুপুরে ভাড়া খাটা কষ্টকর।
এদিকে তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ হওয়ার যশোর পৌরসভার পক্ষ থেকে সড়কে পানি ছেটানো হয়েছে। কিন্তু এত গরমে রাস্তায় ছিটানো পানি মুহূর্তেই বাষ্প হয়ে যায়।
শহরের বিভিন্ন মোড়ে পথচারীদের তৃষ্ণা মেটাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শীতল পানি, খাবার স্যালাইন ও শরবত পান করানো হচ্ছে। আজ দুপুরে শহরের মুজিব সড়কে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে শরবত, ঠান্ডা পানি ও স্যালাইন পানি সরবরাহ করা হয়।
শহরের আশ্রম রোড এলাকায় শরবত পান করায় সাংবাদিক রাহিতুল ইসলাম পাঠাগারের সদস্যরা। তারা আখের লাল চিনি, ট্যাং, কাগজিলেবু, তোকমা, বিট লবণ ইত্যাদি দিয়ে ৫০০ লিটার শরবত বানিয়েছে। সদস্যরা পথচারী, রিকশাচালক, ইজিবাইকচালক, ট্রাকচালকদের এই শরবত পান করান।
পাঠাগারের সমন্বয়ক শেখ রমজান বলেন, ‘গরমে অতিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের পিপাসা মেটানোর জন্য আমাদের এই ছোট্ট আয়োজন। এমন গরম থাকলে আমাদের এই কর্মসূচি চলবে।’
যশোর সরকারি এমএম কলেজের পুরনো ক্যাম্পাসের পাশে মৌসুমি ফল বাঙ্গি বিক্রি করছেন ঝুমঝুমপুর এলাকার মিজানুর রহমান। নিজে ভ্যান চালিয়ে যশোর সদরের রূপদিয়া এলাকা থেকে তিন হাজার টাকার বাঙ্গি নিয়ে এসেছেন। প্রতিটি বাঙ্গি বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ১২০ টাকায়।
এই বিক্রেতা জানান, ‘রোজার সময় থেকে বাঙ্গি বিক্রি করছি। এই গরমে লোকজন বাঙ্গি কিনছে। প্রতিদিন কমবেশি হাজার টাকা থাকে।’
যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নার্স চায়না খাতুন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ২৭১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন ১৯ জন। হাসপাতালের সংক্রমণ (ডায়রিয়া) ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৩ জন । গত ২৪ঘণ্টায় ভর্তি ১৫ জন। এর মধ্যে ছাড়পত্র নিয়ে গেছেন ১৯ জন। এ ছাড়া প্রচণ্ড গরমে কী করণীয়, সে বিষয়ে প্রতিদিন ১০-১৫ জন রোগী পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
এদিকে, এই গরমে বিনা কারণে রোদে ঘোরাফেরা না করার পরামর্শ দিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. মধুসূদন পাল। খুব সকালে হাঁটাহাঁটি ও ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ করা যাবে। কিন্তু সেটি যেন পরিমিত হয়। প্রচুর পানি, তরল খাবার, মৌসুমি ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই পচা-বাসি খাবার গ্রহণ করা যাবে না। ঘরে কিংবা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে। শরীর খারাপ হলে নিকটবর্তী হাসপাতাল অথবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে।’
একুশে সংবাদ/ব.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :