অসুস্থ শিশু নিয়ে ভিক্ষা করতেই প্রতিবেশী সেজে চুরি করা হয় ৮ মাসের আব্দুল্লাহ নোমানকে। পরে তাকে পঙ্গু বানাতে পুড়িয়ে দেয়া হয় হাতের পাঁচ আঙুল। অবশেষে চুরি যাওয়ার ২৯ দিন পর ছদ্মবেশী পুলিশের অভিযানে শিশু নোমান উদ্ধারসহ অভিযুক্ত নারী আইরিনকে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।
বুধবার (১ মে) রাতে ময়মনসিংহ শহরের রেলস্টেশনের কাছাকাছি একটি বাড়ি থেকে আব্দুল্লাহ নোমানকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর গাজীপুর এনে বৃহস্পতিবার (২ মে) তার সুচিকিৎসার জন্য পুলিশি সহযোগিতায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, পরিকল্পিতভাবে পঙ্গু করে শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তিতে নামানোর অভিযোগ বেশ পুরনো। প্রায়ই দেখা যায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন পথেঘাটে বিকলাঙ্গ শিশুদের ভিক্ষার নামে ব্যবসা করাচ্ছে একশ্রেণির অসাধুচক্র। এরই ধারাবাহিকতায় শিশু নোমানকে অপহরণ করা হয়।
শিশু নোমান চুরির খবর গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর তৎপর হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একাধিক টিম ছদ্মবেশে বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশনসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযানে নামে। অবশেষে ময়মনসিংহ থেকে শিশু নোমানকে উদ্ধারসহ ভিক্ষুক আইরিনকে গ্রেফতার করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২ মে) বাবা মায়ের কোলে তুলে দেয়া হয় শিশু নোমানকে। ২৯ দিন পর সন্তান ফিরে পেয়ে আপ্লুত স্বজনরা কৃতজ্ঞতা জানান।
শিশু নোমানের বাবা বলেন, আমাদের সন্তানকে থানা পুলিশ আমাদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে। এ কারণে তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
নোমানের মা বলেন, যাদের উসিলায় আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেয়েছি। তাদের সন্তানরা যেন সুস্থ থাকে, ভালো থাকে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সহকারী পুলিশ কমিশনার ফাহিম আসজাদ জানান, ভিক্ষাবৃত্তি করাতেই প্রতিবেশী সেজে গাজীপুরের নাওজোড় থেকে ৩ এপ্রিল শিশুটি চুরি করে নিয়ে যায় অভিযুক্ত আইরিন। পরে ফুটফুটে ওই শিশুটির হাতের আঙুলও পুড়িয়ে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন অভিযুক্ত ওই নারী।
তিনি বলেন, অভিযুক্ত আইরিন শিশু নোমানকে দিয়ে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করানোর কথা স্বীকার করেছেন। গত ২৬ এপ্রিলও নোমানকে সঙ্গে নিয়ে ভিক্ষা করেছেন।
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, কোলের শিশুকে অসুস্থ বা পঙ্গু দেখানো গেলে বিবেকবোধ থেকে মানুষ ভিক্ষা দেয়। এই কারণেই একশ্রেণির অসাধুচক্র শিশুদের চুরি করে তাদের পঙ্গু বানিয়ে ভিক্ষা করায়।
৩ এপ্রিল জিএমপির বাসন থানা এলাকায় নোমান আবদুল্লাহ’র মা সন্তানকে গোসল করিয়ে রুমে রেখে কাপড় ধোয়ার জন্য গোসলখানায় যায়। ফিরে এসে রুমে সন্তানকে দেখতে না পেয়ে আশপাশে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে খুঁজে না পেয়ে পাশের রুমের ভাড়াটিয়া আইরিনকে আসামি করে মামলা করেন।
একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :