চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরায় দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে অবশেষে আন্তঃজেলা সড়কের দু’ধারের মরা, বৈদ্যুতিক তারের সাথে যুক্ত থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ক গাছ অপসারণ শুরু হয়েছে।
সদর উপজেলার আমনুরা থেকে গোদাগাড়ী সড়কের ২৫৮টি গাছ নিলামে বিক্রি করেছে জেলা পরিষদ। সড়কের পাশে থাকা অনেক মরা গাছ পড়ে দুর্ঘটনা, বাড়িঘরের উপর থাকা গাছের শুকনো ডালপালা পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটার পর দীর্ঘদিন ধরেই মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ এসব গাছ অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা।
এদিকে, সড়কের দু’ধারের ফাঁকা জায়গায় ব্যাপকহারে বনায়নের পরিকল্পনা রয়েছে জেলা পরিষদের। জানা গেছে, আমনুরা-গোদাগাড়ী আঞ্চলিক সড়কের পাশে শিশু, কড়ই ও নিমগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। ১৯৮৭ সালের দিকে রোপণ করা এ সড়কের দু’ধারে থাকা গাছের অনেকগুলোই ঘুণ ধরার পাশাপাশি মরা, শুকনো ও পরিপক্ক। এ সড়ক দিয়ে পথচারি প্রতিনিয়ত যাতায়াতের পাশাপাশি বিভিন্ন যান চলাচল করে থাকে। এসব গাছের ডাল পড়ে আহত হয় পথচারীরা। এছাড়াও গাছ পড়ে সড়কে যান চলাচলে বিঘœ ঘটে। এই সড়কের আমনুরা এলাকায় বেশিরভাগ গাছ বাড়ির টিন ও বাড়ির ছাদের উপর ও বৈদ্যুতিক তারের মধ্য দিয়ে গেছে। এতে নানান আশঙ্কা নিয়ে দিন পার করছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে ভুক্তভোগিরা মরা, শুকনো ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণের দাবি জানায় তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের আশঙ্কার কথা ভেবে গতবছরের ১১ সেপ্টেম্বর আমনুরা হতে ঝিলিম বাজার হয়ে কেন্দুল পর্যন্ত সড়কের দু’ধারে মরা, আধামরা, বিদ্যুতের সঞ্চালনকৃত লাইনে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ব গাছ অপসারণের জন্য আবেদনপত্র দেয় ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদ। ইউপি চেয়ারম্যান সাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, এসব মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছের কারনে ইতোপূর্বে দূর্ঘটনা ঘটেছে। তাই গাছগুলো অপসারণের জন্য জরুরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের অনুরোধের পর দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে সে গাছগুলো চিহ্নিত করে নিলাম করে অপসারণ করছে জেলা পরিষদ। প্রায় ২৬ লাখ টাকায় ২৫৮টি গাছ বিক্রি করেছে জেলা পরিষদ। ইতোমধ্যেই গাছ কাটা ও অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। যা আসন্ন বর্ষার আগেই সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। গাছ অপসারণ হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাসহ পথচারীরা শঙ্কামুক্ত হয়েছে। গত ৭ বছর আগে আমনুরা শুকনাদিঘী এলাকার আব্দুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের উপর মরা গাছ পড়ে এবং তিনি মারা যান।
নিহত আনোয়ারা বেগমের মেয়ে মোসাঃ আসমা জানান, ঝড় ওঠার সময় বাইরে গরু আনতে যান মা। এসময় মরা গাছের অংশ পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। আমনুরা মুন্সিপাড়া এলাকার মনিমুল হক তুফান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এসব গাছ সড়কের দু’ধারে ঝুঁকির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। হরহামেশায় ঘটে দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদকে অনুরোধ করেও কাজ হয়নি। প্রতিনিয়ত শঙ্কার মধ্যে চলাচল করতে হতো এ সড়ক দিয়ে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর জেলা পরিষদ এমন উদ্যোগ নেয়ার কারনে শঙ্কামুক্ত হতে পারা গেছে। টংপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিম জানান, গোদাগাড়ী সড়কের গাছগুলো প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বছর আগের লাগানো। এর বেশিরভাগ গাছই পরিপক্ক হয়েছে আবার ঘূণ ধরা। অন্যান্য গাছগুলোও মরেছে, আবার কিছু আধামরাও হয়েছে। এলাকায় বিভিন্ন দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেতে এসব গাছ দীর্ঘদিন ধরে অপসারণের দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছিল। মরা গাছের ডালপালা পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
আমনুরা চান মুন্সিপাড়ার রুমি খাতুন জানান, বাড়ির উপরে থাকা এসব গাছ ঝড়ের সময় ডালপালা পড়ার পাশাপাশি জানমালের ক্ষতিও হতে পারে। এসময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। মোঃ পাতুল নামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এলাকাবাসীর প্রতি কথা ভেবে পরিপক্ব, মরা ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণ করছে জেলা পরিষদ। কিন্তু গাছগুলো অপসারণের পর ফাঁকা জায়গা তৈরি হবে তাতে আরো কয়েক গুণ গাছ লাগানোর দাবি জানান। কারণ গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
ঝিলিম ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম লুৎফুল হাসান বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদকে ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো কেটে নেয়ার জন্য অবহিত করা হয়। লিখিতভাবে জানানো হলেও দীর্ঘ সময় পর জেলা পরিষদ অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সড়কে থাকা সবগুলো গাছ অপসারণ করা হচ্ছে না। ইউপি সদস্যদের উপস্থিতিতে শুধুমাত্র ঝুকিপূর্ণ ও পরিপক্ক গাছগুলো অপসারণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এদিকে মরা ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ষ গাছগুলো অপসারণে ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর জেলা পরিষদের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় প্রস্তাব ও অনুমোদন করা হয়। এরপর রাজশাহী বিভাগীয় বন দফতর বরাবর ২৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ক গাছের মূল্য নির্ধারণে পত্র দেয় জেলা পরিষদ এবং চলতি বছরের ২১ জানুয়ারী জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় তা অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে ১৩ ফেব্রুয়ারী গাছগুলো নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা ব্যক্তির নিকট গাছগুলো বিক্রি করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আফাজ উদ্দীন জানান, নিয়মানুযায়ী নিলামে অংশ নেয়া সর্বোচ্চ দরদাতাদের নিকট ২৫৮টি মরা, ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ক গাছ বিক্রি করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী ঝরে পড়া, মরা ও পরিপক্ক গাছ কাটার অনুমোদন রয়েছে।
এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা এবং ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের উপস্থিতিতে এসব গাছ চিহ্নিত করা হয়। এদিকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রুহুল আমিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এসব মরা, ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপক্ক গাছ অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু বিভিন্ন প্রক্রিয়া করতে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়। তবে যেসব জায়গায় গাছ অপসারণ করা হয়েছে সেখানে চলতি বছরে নতুনভাবে ১০ হাজার বৃক্ষরোপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :