জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার একটি দাখিল মাদ্রাসায় ১৫ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দিয়ে ১৮ শিক্ষক-কর্মচারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মোনোয়ারুল হাসানকে ম্যানেজ করে অনৈতিকভাবে ৩,৩২,৯,৭০ টাকা প্রতিমাসে বেতনভাতা উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্র-ছাত্রী চাহিদামত ভর্তি না হলেও এমপিও টিকানোর জন্য প্রয়োজন মাফিক শিক্ষার্থী ম্যানেজ করে পরীক্ষায় বিশেষ সুবিধা দিয়ে তাদের পাস করানো হয়। মাদ্রাসার প্রত্যেক শ্রেণীতে ২৫/৩০ জন শিক্ষার্থীর নাম থাকলেও অধিকাংশ নামই ভূয়া। অন্য স্কুলে পড়াশোনা করে এমন শিক্ষার্থীদের নাম খাতায় লিখে তাদের প্রায় শতভাগ হাজির দেখানো হয় বলে কয়েকজন শিক্ষক স্বীকার করেছেন।
সম্প্রতি মাদ্রাসায় গিয়ে জানা যায়, কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের বোড়াই গ্রামে বোড়াই রাহিমা খাতুন দাখিল মাদ্রাসাটি ১৯৮০ সালে স্থাপিত হয়ে পাঠদানের অনুমতি পায়। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৩ সালে এমপিওভুক্ত হয়। ১৮ জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়ে চলছে পাঠদান। শিক্ষকদের দাবি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা যথেষ্ট রয়েছে।
কিন্তু শ্রেণিকক্ষে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ১ম থেকে ৩য় শ্রেণির কক্ষে নেই কোনো শিক্ষার্থী। একটি কক্ষের এক পাশের বেঞ্চে বসে আছে পঞ্চম শ্রেণির ২জন শিক্ষার্থী, অন্য পাশের বেঞ্চে চতুর্থ শ্রেণির ৩ জন শিক্ষার্থী। ইবতেদায়ি শাখার চারটি ও দাখিল ১০ম শ্রেণিকক্ষ একদম ফাঁকা। দাখিল ৯ম শ্রেণিতে ২ জন, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৩, ৭ম শ্রেণিতে ২ এবং ৮ম শ্রেণিতে ৩ জন শিক্ষার্থীর দেখা মেলে। উপস্থিত এসব শিক্ষার্থীদের কেউই বাংলা বা ইংরেজি রিডিং ভালমত পড়তে পারেনা। শিক্ষকরাও নিয়মিত ক্লাস নেন না। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮/১০ শিক্ষক অনুপস্থিত থাকেন।
মাদ্রাসার তথ্যমতে, খাতা কলমে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ২৫০ জন। তারমধ্যে কাগজে কলমে প্রতিদিন উপস্থিতি গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী দেখানো হয়।
এলাকার বাসিন্দা ইউপি সদস্য ফেরদৌস হোসেন বলেন, সভাপতির মায়ের দানকৃত জায়গার উপর মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তার নিজের ভাই-ভাতিজাকে চাকুরি দিয়ে মাদ্রাসার পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট করেছে। কিন্তু এই মাদ্রাসায় দিনের পর দিন কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকলেও শিক্ষকরা ঠিকই বেতন উত্তোলন করছেন।
মাদ্রাসার (সুপার) শাহজাহান আলি বলেন, আগে অনেক শিক্ষার্থী ছিল। কমিটির সভাপতির সঙ্গে গ্রামের লোকজনের বিরোধ থাকায় তাদের সন্তানদের এই মাদ্রাসায় পাঠাতে চায় না। দূরের কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করে এখান থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহন করিয়ে বিদ্যালয়টি তিনি টিকিয়ে রেখেছেন। খাতা-কলমের সাথে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি মিল না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও আহম্মেদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আলি আকবর বলেন, আমরা মাদ্রাসার জন্য জমি দান করেছি, যাতে এলাকার সন্তানরা পড়ালেখা শিখতে পারে। কিন্তু এলাকার লোকজন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমার উপর রাগ করে তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠায় না।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মোনোয়ারুল হাসান বলেন, আমরা এর আগে মাদ্রাসা পরিদর্শনে গিয়ে ৮জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পেয়ে সর্তক করলে মাদ্রাসা সুপার ও শিক্ষকরা শিক্ষার্থী উপস্থিতি বৃদ্ধির বিষয়ে আশ্বস্ত করেছিলো। কিন্তু তারা বারবার গাফলতি করেছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পর্যাপ্ত না থাকলে কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত থাকতে পারে না। আমরা আবারও তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ পাঠাব।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল হায়াত বলেন, ওই মাদ্রাসার এমন নাজুক অবস্থার বিষয়ে কেউ আমাকে অবগত করেনি। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/আ.স.উ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :