রাস্তার দুই ধারে নজরকাড়া কৃষ্ণচূড়ার গাছ। সবুজের মাঝে লাল রঙের মূর্ছনা। কাঠফাটা রোদে কৃষ্ণচূড়ার আবীর নিয়ে প্রকৃতি সেজেছে বর্ণিল রূপে। প্রকৃতির এই অপরূপ রঙ্গের সাজ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় পথচারী সহ প্রকৃতি প্রেমীদের। মন নেচে ওঠে আনন্দে। এমনই নয়নাভিরাম দৃশ্য এখন চোখে পড়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌর শহরের প্রধান সড়ক সহ আনাচে কানাচে। ল্যাম্প পোষ্ট নামে একটি স্বেচ্ছা সেবী সংগঠন পৌর শহরকে লাল সবুজের আচ্ছাদনে ঢেকে দিতে ৯ বছর ধরে রাস্তা ধারে প্রায় দুই হাজার দুই শত কৃষ্ণচুড়ার গাছ রোপন করছেন। নানা কারণে অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেলেও প্রায় চার শত কৃষ্ণচুড়া গাছ পত্র পল্লবে বিকশিত হয়ে শোভা বর্ধন করছে।
স্বেচ্ছা সেবী সংগঠন ল্যাম্প পোষ্টের সভাপতি মহিউদ্দীন জনি জানান, শিক্ষিত এবং দক্ষ যুবকদের স্বেচ্ছায় কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা এবং জাতীয় সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি অনুকরণীয় ভূমিকা তৈরি করে সরকারের সাথে সহযোগিতা করে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অবদান রাখতে ২০১৫ সাল থেকে কাজ করছে ল্যাম্পপোষ্ট। বিভিন্ন সামাজিক ও টেকসই উন্নয়ন কাজের পাশাপশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষে শুরু থেকেই পীরগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন রাস্তার ধারে কৃষ্ণচুড়া গাছ রোপন করে আসছে সংগঠনটি। পৌর শহরকে লাল সবুজের চাদরে ঢেকে দিতে ২০১৫ সালে ১০ বছর মেয়াদী "মিশন রেড অ্যান্ড গ্রিন" প্রকল্প গ্রহন করে ল্যম্পপোষ্ট। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে রাস্তার ধারে প্রায় আড়াই শ কৃষ্ণচুড়ার রোপন করেন তারা। নানা প্রতিকুলতায় অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গেলেও পৌর শহরের বিভিন্ন রাস্তার ধারে এখন প্রায় চার শত গাছ শোভা বর্ধনের পাশাপশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ন আবদান রাখছে।
ল্যাম্পপোষ্টের সদস্য বাদল হোসেন, জানান, বাইরে থেকে পৌর শহরে ঢুকতেই রাস্তা দুই ধারে চোঁখে পড়বে শত শত কৃষ্ণচুড়া গাছ। এই গ্রীস্মকালে বেশির ভাগ গাছেই ফুটেছে লাল টুকটুকে ফুল। যা দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়। শুধু নয়নই জুড়ায় না এই প্রখর রোদ্রে অসংখ্য পথচারী ও খেটে খাওয়া মানুষ গাছগুলির শীতল ছায়ার নীচে অশ্রয় নিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করছেন। শোভা বর্ধনের পাশাপশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করছে গাছগুলি।
তাদের এ কর্মসূচী দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে অধৃষ্য ক্লাব, হরিপুরে আক্্িরজেন এবং বোচাগঞ্জে আরো একটি সংগঠন রাস্তার ধারে কৃষ্ণচুড়া গাছ রোপন কর্মসূচী শুরু করেছেন। এরই মধ্যে তারাও ভাল করেছেন।
সুত্র জানায়, বিভিন্ন কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত এক শ ২০ জন শিক্ষার্থী সদস্য হিসেবে রয়েছে সংগঠনটিতে। তারা তাদের লেখা পড়ার খরচের টাকা থেকে কিছু কিছু করে জমিয়ে বৃক্ষ রোপন সহ শীত বস্ত্র বিতরণ কাজ করে আসছেন। পাশাপশি প্রতি মৌসুমে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে অনুদান হিসেবে কৃষ্ণচুড়ার চারা গ্রহন করেন তারা। আগামী বছর তাদের "মিশন রেড অ্যান্ড গ্রিন" প্রকল্প শেষ হতে চলেছে। কিন্তু এখনো পুরো শহরকে লাল সবুজের আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি সংগঠনটি। লক্ষ্য পুরণে তারা এ কর্মসূচীকে আরো সম্প্রসারিতর করার পরিকল্পনা করেছেন।
চলমান বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রশমনে কদম ও কৃষ্ণচূড়ার গাছে প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সমাধান জানিয়ে সংগঠনটির নিজস্ব ভাবনা থেকে সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ১২ জন সিটি করপোরেশন প্রধান, ৩৩১ জন পৌর মেয়র, ৬৪ জন জেলা প্রশাসক, ৪৯৫ জন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ১ জন হিট অফিসারে বরাবর ডাক যোগে খোলা চিঠিও দিয়েছে টিম ল্যাম্পপোস্ট।
পরিবেশর ভারসাম্য রক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি সাধারন মানুষের সেবায় আগামীতেও কাজ করবে সংগঠনটি এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
একুশে সংবাদ/লা র/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :