চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজারামপুর মালোপাড়া ঘাটে রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করেছে গ্রামবাসী। পরে গ্রামবাসীর আটক করা বালুভর্তি ট্রাক পুলিশ গিয়ে ছাড়িয়ে নেয়। শুক্রবার (২৪ মে) রাত ১১টার দিকে রাজারামপুর মালোপাড়ায় মহানন্দা নদীর ঘাটে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরেই রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে মহানন্দা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। বালু উত্তোলনে বাধা দিতে গেলে নানারকম ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয় গ্রামবাসীকে। নদীভাঙনের আশঙ্কা থেকে বাধ্য হয়েই শুক্রবার রাতে গ্রামের বিভিন্ন বয়সী মানুষজন বালুভর্তি ট্রাক আটকে দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর মালোপাড়া ঘাট ইাজারা বন্ধ করেছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু এরপরেও রাতের অন্ধকারে একটি প্রভাবশালী মহল এসব বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এতে নদী ভাঙনের হুমকির মধ্যে পড়েছে রাজারামপুর এলাকার কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি, বসতবাড়ি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই বারবার অনুরোধ করার পর বন্ধ না হলে উল্টো নানারকম ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকির শিকার হয়েও এই অবৈধ কাজে বাধা দিয়েছে গ্রামবাসী।
রাজারামপুর এলাকার ষাটোর্ধ আমজাদ হোসেন জানান, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ ও মিস্ত্রিপাড়ার তারেক আজিজ এই বালু উত্তোলনের মূলহোতা। জোরপূর্বক অবৈধভাবে রাতের অন্ধকারে তারা এসব বালু উত্তোলন করে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। নদী ভাঙন ছাড়াও এসব বালু উত্তোলনের ফলে সড়ক দিয়ে ট্রাক যাওয়ার সময় বালুতে অন্ধকার হয়ে যায় পুরো এলাকা। এমনকি বালুর স্তুপ পড়ে নষ্ট হয় খাবার।
ইলিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, অতীষ্ট হয়েই গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে বালুভর্তি ট্রাক আটক করে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি পুলিশ পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। কিছু সময় পর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিন্টু রহমান ঘটনাস্থলে এসে উল্টো গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং আমাদের বিপক্ষে কড়া ভাষায় কথা বলেন। পরবর্তীতে বালুভর্তি ট্রাক নিয়ে যায় পুলিশ। এখানে পুলিশের ভূমিকা ছিল বালুখেকোদের পক্ষ থেকে গাড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যাওয়া।
স্থানীয় বাসিন্দা ফয়সাল আজম জানান, এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারনে কয়েক মাস আগে বালুভর্তি ট্রাক চাপায় দুই জনের মৃত্যু হয়। এরপরেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যার ফলে পুনরায় তারা এই কাজ শুরু করেছে। বেপরোয়া গতিতে সড়ক দিয়ে বালুভর্তি ট্রাকের যাতায়াতে হরহামেশায় ঘটে দূর্ঘটনা।
এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিন্টু রহমান বলেন, বালুভর্তি ট্রাক আটকানোর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গাড়ি ছাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু থানায় অভিযোগ পেলেই তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবিষয়ে কথা বলতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাছমিনা খাতুনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :