গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১৫ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। সে মোতাবেক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১ হাজার মেঃ টন ধান।বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে এ উপজেলায় অনেকটা ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সে তুলনায় সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের বরাদ্দ একেবারে অপ্রতুল হওয়ায় অনেক কৃষক তাদের ধান সরকারের কাছে বিক্রয় করতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, সরকারী নির্দেশানুযায়ী উপজেলার দুটি খাদ্যগুদামে কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিকেজি ৩২ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৬০০ মেঃ টন ধান কেনা হবে। সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বর্তমান খোলা বাজারে প্রতি মণ ধান ৩০০ টাকা কমে বেচাকেনায় কৃষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
একটি সুত্রের হিসাব মতে সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত ধান কৃষকদের কাছ থেকে কেনার পরেও তাদের ঘরে আরো অন্তত ৯৯ হাজার মেঃ টন ধান থাকবে।
জানা গেছে, কৃষকেরা খাবারের জন্য সামান্য অংশ রেখে সিংহভাগ ধান বিক্রি করে সাংসারিক ব্যয়ভার মিটিয়ে থাকেন।৷ কিন্তু বর্তমান ধানের বাজার নাজুক পরিস্থিতিতে আসন্ন কোরবানীর ঈদের ব্যয় মিটানো কৃষকদের জন্য দুস্কর হয়ে পড়বে।
উপজেলার উত্তর কাজীবাড়ী সন্তোলা গ্রামের কৃষক ফারুক মিয়া বলেন, খুচরা ধান ব্যবসায়ীরা সবসময় ধানের দাম কম বলে থাকেন। তারা নানা কৌশলে কৃষকদের কাছ থেকে কমদামে ধান কেনার চেষ্টা করেন।
এদিকে কৃষি বিভাগ জানায়, এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ উপজেলায় প্রতিবিঘায় ২২ থেকে ২৩ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের আশানুরূপ ফলনে তারা মহাখুশি হলেও কাঙ্খিত দাম মিলছে না তাদের ভাগ্যে।
স্থানীয় আলী হোসেন নামের খুচরা এক ধান ব্যবসায়ীর দাবি ধান শুকানো কম হওয়ার কারনে ২/১ দিন পরেই ধানের ওজন অনেকটা কমে যায়। তিনি বলেন, কৃষকের কাছ থেকে বাড়তি ধান না নিলে মহাজনের কাছে আমাদের ওই ধান বিক্রয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া কৃষকদের বরাত দিয়ে জানান, অঞ্চলভেদে এবার প্রতি বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা। চলমান বাজার পরিস্থিতিতে ব্যয় অনুপাতে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসলের কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় তারা হতবিহ্বল হয়ে পড়ছেন।
একর্মকর্তা বলেন, উৎপাদনের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি রেখে সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা না হলে কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি সাধন হবে। এদিকে বাড়তি উৎপাদনের কারণে হাট বাজারগুলোতে ধানের আমদানী এখন বেশি হচ্ছে।
আর এ সুযোগে স্থানীয় কতিপয় ধান ব্যবসায়ীরা কম দামে ধান কিনে গুদামে মজুত করনের সুযোগ নিয়েছেন।
চলতি এমৌসুমে এ উপজেলার দুটি খাদ্যগুদামে কৃষকদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬০০ টন ধান কেনা হবে। আর চুক্তিবদ্ধ মিল-চাতাল মালিকদের কাছ থেকে চাল কেনা হবে ৫ হাজার ৩২মেঃ টন।
উল্লেখ্য, গত বছর এ উপজেলায় উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৯৭ হাজার মেঃ টন ধান। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ মেঃ টন ধান খাদ্যগুদামের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল।
এমন তথ্য জানিয়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ এইচ এম তৌহিদুল্লাহ বলেন, সরকারি খাদ্যগুদামের সংখ্যা না বাড়ানো পর্যন্ত অনেক কৃষক সরকার নির্ধারিত দরে ধান বিক্রি করতে পারবেন না।এমতবস্থায় কৃষকদের সুবিধার্থে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা পূর্বক কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারবেন ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, অনলাইনে কৃষকদের আবেদন পূর্বক লটারির মাধ্যমে ভাগ্যবান কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাওছার হাবিব বলেন, সরকারিভাবে ক্রয় অভিযান শুরু হয়েছে। এ ধারাব্হিকতায় নির্দিষ্ট সংখ্যক কৃষক ও মিল-চাতাল মালিকেরা সরাসরি খাদ্যগুদামে ধান-চাল বিক্রি করবেন।
একুশে সংবাদ/শ.ই.উ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :