উঁচু নিচু পাহাড়ের বুক চিড়ে এক টুকরো সমতল ভুমির উপর ১৯৭৪ সালে ৭ একর জায়গায় নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার শান্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়।
১৯৮৩ সালে এমপিও ভুক্ত হয় বিদ্যালয়টি। কিন্তু নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়েও চলছে নিয়মিত পাঠদান। বাহির থেকে বিদ্যালয়টিকে দেখলে বোঝার উপায় নেই বাহিরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে মন কারবে যে কারোর, অথচয় বিষয় ভিত্তিক শ্রেণী শিক্ষকের পদ শুন্য দীর্ঘ ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে। প্রচন্ড গরমে পর্যাপ্ত ফ্যানের অভাবে পাঠদানে শ্রেণি কক্ষে অস্ততিতে ভোগেন
শিক্ষার্থীরা। নেই ছাত্রীদের কমন রুম,বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি, ছাত্রাবাস, কম্পিউটার অপারেটর ও কম্পিউটারল্যাব। এমনকি শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষার জন্য নেই কোন মসজিদ। সভা-সেমিনারের জন্য নেই কোন অডিটোরিয়ামের ব্যবস্থা। পাঠদান বন্ধ রেখে সভাসেমিনারের ব্যবস্হা করা হয় শ্রেণীকক্ষে। এভাবেই দীর্ঘ বছর ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে চলছে সত্তর দশকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া মাটিরাঙ্গা উপজেলার শান্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়।এত সমস্যায় জর্জরিত হয়েও সুনাম ধরে রেখেছে প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানটি।
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এত বছর পরেও শিক্ষক সংকট বিরাজমান প্রতিষ্ঠানটিতে। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসা শাখায় তিনটি বিভাগে ৫৫০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানে বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৯জন শিক্ষক। সাধারণ শাখায় বাংলা,জীব বিজ্ঞান,ভৌত বিজ্ঞান,শাররীক শিক্ষা,আইসিটি, চারু ও কারু শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় দুটি ট্রেড কোর্স (মেকানিক ও ইলেক্ট্রনিক্স) চলমান রয়েছে।
দুটি ট্রেড কোর্সে ১৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র ২ জন শিক্ষক ও ২জন ল্যাব সহকারী। ট্রেড কোর্সের জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ থাকলেও নেই ব্যবহারিত সকল জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার আলমিরা,তাই যত্রতত্র ফেলে রাখার হচ্ছে ছাত্র ছাত্রীদের প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র। তাছাড়াও রয়েছে শিক্ষক, শ্রেণী কক্ষ ও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সর্বরাহ ব্যবস্হা নেই বিদ্যালয়টিতে। তাই প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের ব্যাহত হচ্ছে থিউরিক্যাল ও ব্যবহারিক ক্লাস।
৭ম শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ বলেন, আমার কষ্ট হয়, যখন নামাযের জন্য আমরা সবাই শ্রেনীকক্ষে নামায আদায় করি। আমাদের বিদ্যালয়ে যদি একটি মসজিদ নির্মাণ করা হতো। আপনারা আমাদের সহযোগীতা করুন। আমাদের ক্রিড়া শিক্ষক নাই। এতে বিভিন্ন রকম খেলা ধুলার বিষয়ে আমরা অবগত নই। তাই অনেকটা পিছিয়ে রয়েছি আমরা খেলা ধুলা করতে পারি না। কম্পিউটার শিক্ষক না থাকায় কম্পিউটার সম্পর্কে জানতে পারিনা। তাই এ শিক্ষার্থী দাবি আধুনিক শিক্ষা হতে আমরা যেন পিছিয়ে না যাই।
শিক্ষার্থী অভিভাবক এরশাদ মিয়া বলেন, ‘শান্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয় একটি ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অথচ একটি মসজিদ নাই। শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের মান উপযোগী করে গড়ে তুলতে দ্রুত বিদ্যালয়ের শুন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ, ভোকেশনাল/কারিগরি শাখায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্হা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট্যদের প্রতি জোর দাবি জানান।’
বিদ্যালয়ের গনিত শিক্ষক মো: নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে আমি শিক্ষক সংকট নিরসনে জরুরী ভিত্তিতে শুন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি। কারন বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় পাঠ দানে প্রচুর ব্যঘাত ঘটছে। অপর দিকে আমাদের কে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হয়। যা অত্যন্ত কষ্ট সাধ্য।’
প্রধান শিক্ষক মো: মোস্তফা কামাল বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে ৬টি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের পদ শুন্য, যা বলার ভাষা নেই। বাকী শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হয়। যা খুব কষ্টের ব্যাপার। এছাড়াও নেই বিজ্ঞানাগার, ছাত্রীদের কমন রুম, লাইব্রেরী,কম্পিউটার ল্যাব,ছাত্রাবাস, এমনকি নৈতিক শিক্ষার জন্য নেই কোন মসজিদ। পুর্নাঙ্গ সীমানা প্রাচীর না থাকায় নিরাপত্তা হুমকির মুখে বিদ্যালয়টি। এছাড়াও বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে। ইতি পূর্বে শুন্যপদে শিক্ষকের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করা হয়েছে। শীঘ্রই শুন্যপদে শিক্ষক সংকট নিরসন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।’
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শরিফুল ইসলাম বিদ্যুৎ বলেন, ‘বিষয়টি আমি ইতি মধ্যে অবগত হয়েছি। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রেরণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।’
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :