বগুড়ায় শাজাহানপুর উপজেলায় আবাসিক হোটেলের কক্ষ থেকে মা ও শিশু সন্তানের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বেড়ানোর কথা বলে স্ত্রী আশামণি (২০) ও এক বছরের শিশু সন্তাান আব্দুল্লাহ আল রাফিকে হোটেলে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছে তার স্বামী সেনাসদস্য আজিজুল হক (২৩)। এ ঘটনায় শিশু আব্দুল্লাহ’র বাবাকে আটক করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
শনিবার (১ জুন) দিনগত রাতের যেকোন সময় শাজাহানপুর উপজেলার বনানীর ‘শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলে’ এই নির্মম হত্যাকান্ডটি ঘটে। আটক সেনাসদস্য আজিজুল হক চট্টগ্রাম সেনানিবাসে কর্মরত। তিনি জেলার ধুনট উপজেলার কালের পাড়া ইউনিয়ণের হেউটনগর গ্রামের কৃষক হামিদুর রহমানের ছেলে।
শুভেচ্ছা হোটেলের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলামসহ অন্যরা জানান, শিশু ছেলে আব্দুল্লাহ আল রাফি ও স্ত্রী আশা মণিকে (২০) নিয়ে হোটেলে ৩ দিন থাকবেন এমন কথা জানিয়ে শনিবার (১ জুন) রাত ৯টার দিকে সেনাসদস্য আজিজুল সন্ধ্যায় শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলের ৩০১ নম্বর কক্ষে ওঠেন। এরপর রাত ১১টার দিকে আজিজুল হোটেল থেকে বের হয়ে যান এবং পরদিন রবিবার (২ জুন) সকাল ১১টার দিকে আজিজুল হক হোটেল কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করতে আসেন। কিন্তু তার সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তান না থাকায় তাদের সন্দেহ হয়। এরপর তাকে আটক করে থানা পুলিশে সংবাদ পাঠানো হয়। পুলিশ এসে কক্ষ তল্লাশি করে আজিজুল হকের স্ত্রীর গলকাটা বিবস্ত্র মরদেহ এবং বাথরুমে সন্তানের মাথাবিহীন বস্তাবন্দি মরদেহ দেখতে পায়।
নিহত আশামনির বাবা বগুড়া শহরের নারুলী পূর্বপাড়ার মোঃ আশাদুল জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার মেয়ে জামাই আজিজুল তার বাড়িতে বেড়াতে আসে। শনিবার বিকেলে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এরপর রাত ১০টার দিকে আজিজুল তার শ্বশুরকে ফোন করে জানান, শরীর খারাপ লাগায় আশামনিকে বাড়িতে পঠিয়ে সে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। বাড়িতে ফোন করে জানতে পারেন, মেয়ে আশামনি বাড়িতে যায়নি। সারারাত খোঁজাখুঁজির পর রবিবার (২ জুন) সকাল ১১টার দিকে লোকমুখে জানতে পারেন, মেয়ে আশামনি ও নাতি রাফিকে বনানীস্থ শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলে কে বা করার জবাই করে হত্যা করেছে।
শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান, স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর প্রথমে হোটেল কক্ষ ত্যাগ করেন আজিজুল হক। পরে হোটেল কক্ষে এসে নাটক সাজানোর চেষ্টা করলে হোটেল কর্র্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। এরপর পুলিশে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সন্দেহভাজন হিসেবে সেনা সদস্য আজিজুল হককে আটক করে। ওসি’র দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল হক হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। ওসি’র ধারণা, আটক আজিজুল স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার করার পর সন্তানের মাথা পাশের করতোয়া নদীকে ফেলে দিয়েছে। নিহত শিশুর মাথা খুঁজছে পুলিশ।
নিহত আশামনির ভাই শহরের নারুলী এলাকার মেহেদী হাসান সনি জানান, সেনা সদস্য আজিজুল হকের সঙ্গে প্রায় ৩ বছর আগে তার বোনের বিয়ে হয়। ২ মাসের ছুটি নিয়ে সে কিছুদিন আগে বগুড়ায় আসে। এরপর তার ভগ্নিপতি আজিজুল গত বৃহস্পতিবার শহরের নারুলীতে শ^শুর বাড়ি বেড়াতে আসে। বেড়ানোর কথা বলে আজিজুল হক তার বোন ও শিশু ভাগ্নেকে নিয়ে শনিবার বেরিয়ে পড়েন। মেহেদী হাসান সনি’র দাবি, বিয়ের সময় তারা ভগ্নিপতিকে মোটা অংকের টাকা যৌতুক হিসেবে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও ভগ্নিপতি আজিজুল নানা অজুহাতে টাকা চাইতেন। তাদেও মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলমান ছিল। ধারণা করা যাচ্ছে, দাম্পত্য কলহের কারণেই তার বোন ও ভাগ্নেকে খুন করেছে আজিজুল।
সংশ্লিষ্ট বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম জানান, জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সুষ্ঠু তদন্ত শেষে হত্যাকারীকে দ্রুতই বিচারের মুখোমুখি করা হবে। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত একটি হত্যামামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :