নদী ভাঙ্গনের তীব্র প্রতিযোগীতায় চট্টগ্রাম। প্রতি বছর নতুন নতুন করে গৃহহীন হয়ে পড়ছে হাজারো পরিবার। এই নন্দী ভাঙ্গনের কলার ঘ্রাস থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মসজিদ মন্দির, গীর্জা প্যাঘোড়া,প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্টান। বন্যা, পাহাড়ি ঢল ও জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, সাঙ্গু ও হালদা নদীর পাড় ভাঙছেই।
সাম্প্রতিক বন্যায় চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলার ১৩৭টি পয়েন্টের ১২ কিলোমিটার নদীর তীর ও ২০টি রেগুলেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায়। পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদী ও টঙ্কাবতী খালের পানি বিপদসীমায় প্রবাহিত হয়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাঁধ মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান,বোয়ালখালী উপজেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় প্রবহমান নদী ও খালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে পাউবো বিভাগ-১-এর আওতাধীন এলাকার ৯৮টি স্থানের প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পটিয়ার জঙ্গলখাইনে ৩৪৫ মিটার খালের পাড়, বড়লিয়ায় ১২০ মিটার খালের পাড়, জিরি রেগুলেটরের ক্লোজার, ভাটিখাইনে ১২০ মিটার খালের পাড় ভাঙন, কাশিয়াইশে রেগুলেটরের ব্যারেল সেটেলমেন্ট, চন্দনাইশের বৈলতলী ও বরমায় ২৮৭ মিটার সাঙ্গু নদীর ভাঙন, লোহাগাড়ার পদুয়ায় ২০০ মিটার ডলু নদী ভাঙন, আমিরাবাদে ৩৯৫ মিটার খাল ও নদীর তীর ভাঙন, আধুনগরে ৬৯০ মিটার খালের পাড় ও নদীর তীর ভাঙন, সাতকানিয়ার চরতি এলাকায় ৪৫০ মিটার সাঙ্গু নদীর ভাঙন, সাতকানিয়া পৌরসভায় ৭০ মিটার খালের পাড় ভাঙন, দক্ষিণ আমিলাইশে ৭০ মিটার খালের পাড় ভাঙন, এওচিয়া ও নলুয়ায় ১৫০ মিটার খালের পাড়ে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। আনোয়ারার জুঁইদণ্ডীতে ২ হাজার ৯৫০ মিটার বেড়িবাঁধ ধস ও নদীর তীর ভাঙন, রায়পুরে ১ হাজার ৩৫০ মিটার খালের পাড় ও নদীর তীর ভাঙনের পাশাপাশি নতুন কাজের ডাম্পিং জোন ক্ষতিগ্রস্ত ও বেড়িবাঁধে ভাঙন, পরৈকোড়ায় ৮০০ মিটার ইন্টেরিয়র ডাইক ক্ষতিগ্রস্ত, বারখাইন, বরুমচড়া ও হাইলধরে ৬৮০ মিটার ইন্টেরিয়র ডাইক ক্ষতিগ্রস্ত, ফটিকছড়ির নাজিরহাট ও সমিতির হাটে ৭০৫ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত, সুন্দরপুরে ৬৭০ মিটার নদীর তীর ভাঙন, বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত, রেগুলেটরের রিটেইনিং ওয়াল ও অ্যাপ্রোন ক্ষতিগ্রস্ত, সুয়াবিলে ৩০০ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত, কাঞ্চননগরে ১২০ মিটার খালের পাড় ভাঙন এবং হাটহাজারীর ফতেপুরে ৬০ মিটার রেগুলেটরের ব্লক ধসে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে পাউবোর (বিভাগ-১) নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এবার পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। তাই ১৯৬০ সালে নির্মিত বাঁধ টপকে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। এতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলা যথাক্রমে বোয়ালখালী, পটিয়া চন্দনাইশ,আনোয়ারা,বাঁশখালী, ও উত্তর চট্টগ্রামের দুটি উপজেলায় ৮৮টি স্থানে নদী ও খালের প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে কয়েকটি প্রকল্পের কাজও চলমান রয়েছে। এসব জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এসব সংস্কারে অন্তত ৪৫ কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানান তিনি।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটি বিভাগের আওতাধীন এলাকার মধ্যে রাউজানের ২৯টি স্থানে ১ হাজার ২১০ মিটার নদী ও খাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডাবুয়া খালের বাম তীরে তেলিপাড়ায় ৭০ মিটার, সর্তা খালের ডান তীরে উত্তর সর্তা এলাকায় ৫০ মিটার, সর্তা খালের গনি পাড়ায় ১০০ মিটার, ডাবুয়া খালের ডান তীরে তৌকির আহমদ সড়কে ৫০ মিটার, সর্তা খালের বাম তীরে চিকদাইর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় ৭০ মিটার, পৌরসভায় ডাবুয়া খালের বাম তীরে সৈয়দ কাজী বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় ৬০ মিটার বাঁধ, বাম তীরে সৈয়দ বাড়ি সংলগ্ন বাঁধের ব্রিজ ১৫ মিটার, ডাবুয়া খালের ডান তীরে জানানীহাট ব্রিজ সংলগ্ন বাঁধের ঢাল ১০০ মিটার, ডান তীরে ব্রাহ্মণ পাড়া এলাকায় বাঁধের ঢাল ১০০ মিটার, ডাবুয়া খালের ডান তীরে জানালীহাট ব্রিজ সংলগ্ন বাঁধ ৩৯০ মিটার, ডাবুয়া খালের ডান তীরে শ্যামল পালিত ব্রিজ সংলগ্ন, বাম তীরে সন্দ্বীপ পাড়া এলাকায় বাঁধ ৮০ মিটার, ডাবুয়া খালের বাম তীরে রোহিঙ্গা বিলে বাঁধের ঢাল ৫০ মিটার, ডান তীরে আলীরখীল ব্রিজ সংলগ্ন বাঁধের ব্রিজ ৩৫ মিটার, কাগতিয়া রেগুলেটর সংলগ্ন হালদা নদীর বাম তীরে ৪০ মিটার, রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটায় কর্ণফুলী নদীর বাম তীরে ৮০ মিটার, কদমতলীর মাহফুজ খালের বাম তীরে ১০ মিটার, কদমতলীর ফ্লাড বাইপাসে মাহফুজ খালের বাম তীরে ১০ মিটার, বেতাগীর কর্ণফুলী নদীর ডান তীরের দুটি অংশে ১০০ মিটার, পদুয়ার বাঙ্গালহালিয়া খালের ডান তীরে ৩০ মিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্ণফুলী ও হালদা নদীর ১২টি রেগুলেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শার মান্দারী খালের রেগুলেটর ও নেভিগেশন সংলগ্ন এলাকায় হালদা নদীর ডান তীর ৫০ মিটার, মেখলের বোয়ালিয়া খালের ৭ ও ৫ ভেল্ট রেগুলেটরের মধ্যবর্তী গাইড বাঁধ, হালদা নদীর ডান তীরে ৫০ মিটার, গড়দুয়ারা প্যারাখালী খালে রেগুলেটর সংলগ্ন এলাকায় হালদা নদীর ডান তীরে ৩২ মিটার, গড়দুয়ারা চেংখালী খাল বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ সংলগ্ন হালদা নদীর ডান তীরে ৬০ মিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :