কাজল রেখা মুন্নী (৪৫) একজন গৃহবধূ। সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতা আর ছেলে মেযের ভবিষ্যত ভাবনা নিয়ে ভাগ্যে বদলে শুরু করেছেন হ্যান্ড পেইন্টের কাজ।
গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে তার নিজের হাতের কলা কৌশলে রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন চমকপ্রদ নানা রংয়ের বাহারি নকশায় তৈরি করছেন বিভিন্ন ধরনের জামা-কাপড় ও অন্যান্যে বস্ত্র। এরইমধ্যে তার তৈরিকৃত পোশাক বাজারজাত শুরু হলে এর চাহিদা অনেকটা বাড়তে থাকে।এতে মুন্নির উৎসাহ উদ্দীপনা আরো বৃদ্ধি পায়। তিনি একাজে অধিকতর মনোযোগি ও যত্নশীল হয়ে নিজের উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বুনতে থাকেন কঠোর পরিশ্রমি মুন্নী বেগম।
মুন্নী বেগমের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা কলেজপাড়ায়। তিনি সাবেক মেম্বর খায়রুল ইসলামের স্ত্রী। স্বামী, ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে মুন্নীর সংসার।
সরেজমিনে মুন্নি বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে-মুন্নী বেগমের হ্যান্ড পেইন্ট কাজের অপরূপ দৃশ্য। সেখানে তার নিজ হাতের রংতুলি ও ডাইসের স্পর্শে বর্ণিল হয়ে ওঠছে হরেক রকমের পোশাক। ওই এলাকার কয়েকজন নারী তার একাজে উৎসাহী হয়ে মুন্নি বেগমকে সহযোগিতা করছেন।তারাও মুন্নী বেগমের ন্যায় কাজ শিখে নিজেরাও আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বি হওয়ার চেষ্টা করছেন।
এসএসসি পাশ কাজল রেখা মুন্নী এসডিএফ নামের একটি এনজিও থেকে ডেইরি-পোল্ট্রিসহ হ্যান্ড পেইন্টের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এসব প্রশিক্ষণ নিয়ে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তা শেষ হলেও বসে থাকেননি অদম্য মুন্নী। এখন নিজ বাড়িতে স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেছেন হ্যান্ড পেইন্টের কাজ।
স্থানীয় নলডাঙ্গা বাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ফেব্রিক্স কিনে রংতুলি, ডাইস ও ফ্রেমের মাধ্যমে তৈরি করছেন রুচিসম্মত থ্রিপিস, টেবিল ক্লোথ, বিছানার চাদর, কুসুম বালিশ ও জানালা-দরজার পর্দা ইত্যাদি। আর এসব বস্ত্রাদি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন বাজারে। বর্তমানে তার এই কারখানায় ১০ জন নারী শ্রমিক কাজ করছেন।
স্থানীয় অনেকেই মুন্নী বেগমের তৈরি কাপড় কিনেছেন। এরমধ্যে লিজা আক্তার নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, মুন্নী আপার হাতের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলা পোশাক দেখে নারীপুরুষ অনেকেই মুগ্ধ হয়েছে। ইতিমধ্যে তার পেইন্টের জামা কাপড় অনেকেই কিনছেন।আমিও তার তৈরি থ্রি কিনেছি।
এই হ্যান্ড পেইন্টের কারখানার শ্রমিক ফরিদা বেগম বলেন, মুন্নী আপা কঠোর পরিশ্রমী। তার কারখানায় সামান্য পারিশ্রমিক নিয়ে আমরা ১০ জন নারী কাজ করছি। তিনি প্রতিষ্ঠিত হলে আমরাও এক দিন ভালো বেতন পাবো।
এ বিষয়ে কাজল রেখা মুন্নী বলেন, সবেমাত্র হ্যান্ড পেইন্ট কারখানা চালু করেছি। এটি অত্যন্ত লাভজনক। এখন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। তবে পুজিঁ না থাকায় বড় পরিসরে কাজ করতে পারছি না। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে আরও শতাধিক নারীর কর্মসংস্থান করা যেতে পারে এখানে।
গাইবান্ধা বিসিক সহকারী জেনারেল ম্যানেজার রবিন রায় বলেন, মুন্নী বেগমের কারখানাটির খোঁজ খবর নিয়ে তাকে আর্থিক সহায়তায় ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :