গল্প নয় সত্যি-তালগাছ এখানে কথা বলে
উত্তর জনপদের একটি ঐতিহাসিক জেলা হলো নওগাঁ। রাজশাহী বিভাগের এ জেলায় রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনা। সব ছাপিয়ে জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙ্গায় দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ৬০০ শতাধিক তালগাছ।
আর এই তালগাছ একটি মানুষকে করেছে মহান। অন্যদিকে এলাকাকে দেশের মানুষের কাছে করেছে সুপরিচিত। সাথে সাথে ওই এলাকায় পরিবেশরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে সেই তালগাছগুলো।
বলছিলাম সেই ১৯৮৬ সালের কথা। এই হাজিনগর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান সাধন চন্দ্র মজুমদারের কথা। প্রায় ২ কিলোমিটার লম্বা সড়কের দুই পাশে প্রায় ৭০০ তালের বীজ বপন করেন তিনি। সেই বীজ থেকে তালগাছ হয়ে তা এখন মাথা জাগিয়ে কথা বলছে।
প্রতিদিন হাজারো মানুষ এখানে আসছে একটু তালগাছের ছায়ার পরশ নিতে। তৎকালীন সেই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাধন চন্দ্র মজুমদার বর্তমান (২০২৪ সাল) সরকারের খাদ্যমন্ত্রী। তিনি এই তালগাছের মাধ্যমে অমর হয়ে থাকবেন। থাকবেন দেশের ইতিহাসের একটি অংশ হয়ে।
তাল গাছগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফিট লম্বা হয়ে রাস্তার দু`ধারে শোভাবর্ধন করে আসছে।
বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এর তথ্যমতে, ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন রাস্তা ও খাড়ির (খাল) পাশে প্রায় ৭২০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে ৩০ লাখের বেশি তাল গাছ। বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা, পত্মীতলা ও ধামুইরহাট, রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর উপজেলার রাস্তার দু`পাশে লাগানো হয়েছে এসব তালগাছ।
তারপরও তাল গাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই তাল গাছ হারিয়ে গেলেও নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গায় এখনও কালের সাক্ষী হয়ে তাল গাছের সারি। রাস্তার দু`ধারে সৌন্দর্য বর্ধন করে যাচ্ছে।
ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের আলম হোসেন বলেন, তাল গাছগুলো আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের অহংকার। এখন প্রতিনিয়ত শত শত মানুষ দেখতে আসছে তাল গাছগুলো। আজ যখন তাল গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে তখন আমার গ্রামের রাস্তার দু`ধারে শত শত তালগাছ দাঁড়িয়ে আছে। এতে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি। আমাদের সাথে যেন তালগাছ কথা বলে। আমরা নিজেরাই ওদের যত্ম নেই।
সবুজ মাঠের বুক চিরে নিয়ামতপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে হাজীনগর ইউনিয়নে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম ঘুঘুডাঙ্গায় এখন মেলাও মেলে। মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তার ফাঁকে ফাঁকে মানুষের বসার বেঞ্চ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাল গাছে ঝুলছে বাবুই পাখির বাসা। এ যেন কবিতার পটে আঁকা ছবি! কোনো আগন্তুক এ সড়কে এলেই বিমোহিত হয়ে যান এক অপার্থিব সৌন্দর্যে।
আশেপাশে গড়ে উঠেছে কিছু দোকানপাটও।
আপনার মতামত লিখুন :