ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ বাচ্চু মাতুব্বরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি থেকে বাঁচতে তিনি স্কুলের তালা ভেঙ্গে ভাউচার গোপন করায় তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হয়েছে। জিডির বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও শিক্ষক সূত্রে জানা যায়, পুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাচ্চু মাতুব্বরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এসব খবরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মামুন খন্দকার বিদ্যালয়ের হিসাব নিকাশ নেওয়ার জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি আয়-ব্যয় নেওয়ার তদন্ত কমিটি করে দেন। যার আহবায়ক করা হয় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বাবলু দেওয়ানকে।
প্রধান শিক্ষক বাচ্চু মাতুব্বরের নিকট ভাউচার তলব করলে তিনি ২০২০-এর আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাউচার জমা দেন। সেই ভাউচার আহ্বায়ক বাবলু দেওয়ান কমিটিদের নিয়ে অডিট শুরু করেন। সকল ভাউচার বিদ্যালয়ে একটি আলমিরাতে তালাবদ্ধ করে সংরক্ষণে রাখেন আহবায়ক বাবলু দেওয়ান।
দ্বিতীয় বৈঠকে বসার আগেই গত মাসের ১৩ জুন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষের আলমিরা ভেঙ্গে ভাউচার চুরি হয়। ঐদিনই আহবায়ক বাবলু দেওয়ান আলমারি ভেঙ্গে ভাউচার চুরির অভিযোগ করেন ভাংগা থানায়।
এ ঘটনায় ভাঙ্গা থানার তদন্তকারী অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই ) কিবরিয়া জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাচ্চু মাতুব্বর তিনি স্কুলের তালা ভেঙ্গে ভাউচার সরিয়েছেন তার প্রমাণ মিলেছে এবং প্রধান শিক্ষক অকপটে স্বীকারও করেছেন। তার বিরুদ্ধে আদালতের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় ভাউচার উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মামুন খন্দকার বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি, যখনই তদন্ত করা হচ্ছে তখন তিনি ভাউচার গোপন করে দুর্নীতি ঢাকার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে থানায় দুইটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে তদন্ত কমিটির আহবায়ক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বাবলু দেওয়ান জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যখন রেলের ৩৮ লক্ষ টাকার হিসাব, ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি নেওয়া, বিদ্যালয়ের সকল আয় ব্যয়, তার কক্ষ থেকে ফ্যান চুরির ঘটনাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ম্যানেজিং কমিটি আমাকে অডিট করার দায়িত্বভার অর্পণ করায় আমি ভাউচার খতিয়ে দেখতেছিলাম। এক পর্যায়ে দুই বছরের ভাউচারগুলো আলমারির মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখলে প্রধান শিক্ষক তালা ভেঙ্গে ভাউচার গোপন করেন। ঘটনাটি জিডি করার পর শিক্ষকদের সামনে তিনি তালা ভেঙ্গে ভাউচার গোপন করার কথা স্বীকার করেন।
এদিকে প্রধান শিক্ষক বাচ্চু মাতুব্বর বলেন, আমি ২০২০ সালের ২৯ জুলাই অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। সভাপতি বিপক্ষে থাকলে যা হয় তাই হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ২০২০ এর আগস্ট থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সভাপতির অনুমতি নিয়ে যে সব কাজ সম্পন্ন করেছি। তার সকল অডিট সম্পন্ন হয়েছে। সেই পুরাতন ভাউচার নতুন সভাপতি এসে আমাকে ফাঁসাতে আমার কাছ থেকে ভাউচার নেয়া হয়েছে। আমি ভাউচার গুলো নিরাপত্তা কর্মী শামসুল আলমের মাধ্যমে ভাউচারগুলো নিয়েছি তালা ভেঙ্গে নেওয়া হয় নাই।
অভিভাবক রুবেল হোসেন জানান, পুলিয়া স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের ছড়াছড়ি, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির কথা উঠায় একটি কমিটি করে দিয়েছেন সভাপতি মামুন সাহেব। সেখানে ভাউচার প্রধান শিক্ষক তালা ভেঙ্গে গোপন করেছে। আমরা এর বিচার কামনা করছি।
এ ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জালাল উদ্দিন জানান, আমাকে এ বিষয়টি সভাপতি সাহেব আমাকে অবহিত করেছেন, কোন স্কুলের প্রধান শিক্ষক যদি দুর্নীতি অনিয়ম করে তাহলে ওই স্কুলের কমিটি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। তারপরেও যদি প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি পাওয়া যায় অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে উপজেলার তুজারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ওহাব ভুঁইয়া জানান, আমাদের স্কুল থেকে এই বাচ্চু মাতুব্বর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সাসপেন্ড হয়েছিলেন এক পর্যায়ে তাকে স্কুল থেকে চাকরিচুত্য করা হয়েছে। পরে অনেক হাতে-পায়ে ধরার জন্য তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
একুশে সংবাদ/এসএডি
আপনার মতামত লিখুন :