সিলেট জুড়ে বার বার বন্যায় জীবন যাত্রায় ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। বন্যার ভোগান্তিতে সিলেটের নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতই কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। এর মাঝে এবার পরপর তিন দফা বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট। বৃষ্টি আর ভারতীয় ঢলের কাছে বার বারই হার মানতে হচ্ছে সীমান্তবর্তী এ জনপদকে।
বার বার বন্যায় থমকে যাচ্ছে জীবন যাত্রা, অচল হয়ে পড়ছে নগর থেকে গ্রাম। ক্ষতিও হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা।
সিলেটে বৃষ্টি থামছেনা। বৃষ্টি হচ্ছে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে। এতে দ্রুত বাড়ছে পানি। সীমা ছাড়িয়েছে বিভিন্ন নদী। বন্যা শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ডুবছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা। আর সিলেট নগরের অবস্থা তো এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’।
তৃতীয়বার বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সিলেটের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। রোববার (৩০ জুন) থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হলেও বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট বিভাগে ৮ জুলাই পর্যন্ত তা স্থগিত করা হয়। এমতাবস্থায় আবার প্লাবিত হয়েছে সিলেটের নিম্নাঞ্চল। এমনকি নগরীতেও প্রবেশ করেছে পানি।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের অনেকেই বলছেন, এক দফা পরীক্ষা পেছানো হলেও স্বস্তিতে নেই তারা। বন্যার কবলে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হওয়ায় পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেটে শেষ ৩৬ ঘন্টায় ৩০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টি হয়েছে ২৯৪ মিলিমিটার। আর মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৪ মিলিমিটার। একইসাথে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হচ্ছে অবিরত। ফলে বন্যা পরিস্থতির অবনতি হচ্ছে সময়ে সময়ে। পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন লাখ লাখ মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের নদীগুলোতে আগের দিনের তুলনায় মঙ্গলবার আরো বেড়েছে পানি। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারার আমলশীদ পয়েন্টে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ৮৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
কুশিয়ারার ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারার শেওলা পয়েন্টে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া সারি, গোয়াইন নদীর পানিও বিভিন্ন এলাকায় অতিক্রম করেছে।
এতে করে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার উপজেলার অসংখ্য এলাকা ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। কানাইঘাট পৌর শহর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। শুধু গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রায় ২৪৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা এবং ১৫১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সিলেটে বন্যায় ৭ লাখ ১১ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ১৯৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন ৯ হাজার ৫৬৮ জন মানুষ। বন্যায় জেলায় প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা ১ হাজার ১৮৪টি।
ষষ্ঠবারের মতো ডুবছে সিলেট নগর :
টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে না পারায় চলতি বর্ষা মৌসুমে ষষ্ঠবারের মতো ডুবেছে সিলেট। নগরের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যেই জলাবদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট নগরের বেশ কিছু এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে নগরের মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরি রাজবাড়ি, তালতলা, জামতলা, কুয়ারপা শিবগঞ্জ, শাহজালাল উপশহর, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, মজুমদারি, ভাতালিয়া, চৌকিদেখী, দক্ষিণ সুরমাসহ বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা।
একুশে সংবাদ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :