এই আছে এই নাই। এভাবেই দিনরাতে ক্ষনে ক্ষনে চলছে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার সর্বত্রই বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা। এই অবস্থায় জনজীবন হয়ে উঠছে দুর্বিসহ। সরেজমিনে ঘুরে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সাদুল্লাপুর উপজেলা শহর ব্যতীত গ্রামগজ্ঞে দিবারাত্রি বেশির ভাগ সময়েই বিদ্যুৎ থাকে না।
ভুক্তভোগি গ্রাহকদের অভিযোগ, দিনে রাতে গরমের তাপমাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ প্রতিনয়ত লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতি যেন তারা নিয়মে পরিণত করে ফেলছেন।
বিশেষ করে গভীর রাতে লোডডিংয়ের মাত্রা যেন আরো প্রকট আকার ধারন করে। মাঝে মধ্যেই নানা অজুহাতে সারাদিন সারারাত ধরে বিদ্যুৎ থাকে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং চলাকালীন সময় গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ কখন পাবে তা জানার জন্য স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জগণের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে।কিন্তু এসময় গ্রাহকদের ফোনের বিরক্তিবোধ মনে করে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সেবায় মোবাইল ফোনটি তারা ইচ্ছাকৃত ভাব বন্ধ রাখেন বলে গ্রাহকদের মধ্যে এমন অভিযোগ উঠছে।
নলডাঙ্গা ইউপির সদস্য ও দেশ বাংলা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী ফুল মিয়া জানান, ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাট জনসাধারনের জন্য তেমন কোন কাজে আসছে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বিদ্যুৎ একেবারে লাপাত্তা হয়ে যায়। এসময় ব্যবসায়ীদের বেচাকেনায় চরম বিপাকে পড়তে হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে বেচাকেনা অনেকটা কমে যায়। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকায় ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে।
ওই এলাকার ছাত্তার মিয়া নামে একগ্রাহক বলেন, রাতের বেলায় বেশির ভাগ সময় বিদুৎ না থাকায় এসব এলাকায় প্রায়ই ছিঁচকে চুরি সিঁদেল চুরিসহ নানা ধরনের ছোটখাট অপরাধমূলক ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে।
এছাড়া দিনে অধিক সময় বিদ্যুৎ না থাকায় এ অঞ্চলের ছোট বড় গড়ে উঠা মিল কল কারখানা প্রায সময়ই বন্ধ থাকে। ফলে এসব কল কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকদের দিনের বেশির ভাগ সময় অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। বিদ্যুতের অভাবে তারা কোন কাজ করতে পারেন না। এ কারনে শ্রমিকদের উপার্জন একেবারে কমে যাওয়ায় খেটে খাওয়া শ্রমিকদের পরিবার পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়।
এ এলাকার ছমিল ও চাউল কল শ্রমিক আইয়ুব আলী, মিঠু মিয়া, আশরাফুল ও সুবাসী রানী জানান, কারেন থাকলে মিল চলে। দুইটা টেকা কামাই হয়। আর কারেন না থাকলে মিল চলে না। সেদিন সারাদিন বসি বসি থাকা লাগে। কামাই হলে পেটে ভাত যায়। আর কামাই না থাকলে খায়া না খায়া দিন যায়। নলডাঙ্গা ইউনিয়নের আহাম্মদ আলী নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, এমনিতে দিনরাতে অসহনীয় গরম। তারপর আবার সন্ধ্যা থেকে গভীররাত পর্যন্ত চলতে থাকে বিদ্যুতের তেলেসমাতি।এতে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চরমভাবে বিঘ্ন ঘটলেও দেখার যেন কেউ।
শুধু তাই নয় প্রচন্ড গরমে চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন কারী পরীক্ষার্থীরা বিদ্যমান লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে। জাকিরুল ইসলাম নামে আরেক গ্রাহক বলেন, দিনের বেলা যাই হোক, কিন্তু রাতে বিদ্যুৎ না থাকলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে অসহনীয় গরমে ঘুমানো খুবই দুস্কর হয়ে পড়ে।
নলডাঙ্গা বন্দরের মহাবুব আলম নামে এক গ্রাহক বলেন, ঘনঘন লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি ভোল্টেজ ওঠানামায় অনেকের ফ্রিজ, টিভি, ফ্যান, সেচ পাম্পসহ বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্র বিকল হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতাভুক্ত সাদুল্লাপুর সাবজোনের ডিজিএম নুরুজ্জামান বলেন, লোডশেডিং একটা জাতীয় সমস্যা। চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় বিরাজমান সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে পল্লী বিদ্যুতের কিছু করার নেই।
একুশে সংবাদ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :