যশোরের সাংবাদিক শামছুর রহমান ‘কেবল’ হত্যা মামলাটির কার্যক্রমটি ১৯ বছর ধরে ‘ফাইলবন্দি’ হয়ে পড়ে রয়েছে। এ কারণে গত দু’যুগেও আলোচিত এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। দীর্ঘ ২৪ বছরে বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ। তবে আইনজীবীরা বলছেন, সরকার উদ্যোগ নিলেই এ হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব।
২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে দৈনিক জনকণ্ঠের যশোর অফিসে কর্মরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল।
আদালত সূত্র জানায়, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল খুন হওয়ার পর ২০০১ সালে সিআইডি এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এরপর মামলার বর্ধিত তদন্তে যশোরের তৎকালীন সাংবাদিক নেতা ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়। একই সাথে সাক্ষীও পরিবর্তন করা হয় বলে বাদীপক্ষের অভিযোগ। এতে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়, অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশিট। বিতর্কিত ওই বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে এই মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হলে বাদী শহীদ শামছুর রহমানের স্ত্রী সেলিনা আকতার লাকি ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উচ্চ আদালতে আপিল করেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সরকার উদ্যোগ নিয়ে উচ্চ আদালতে বাদীর আপিল এবং ফারাজী আজমল হোসেনের রিট নিষ্পত্তি করলে নিম্ন আদালতে এই মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা না আসলে নিম্ন আদালতে এই মামলার কোনো কার্যক্রমই পরিচালনা করা যাবে না।
উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর এম ইদ্রিস আলী জানান, আপিলের দ্রুত নিষ্পত্তি হলে মামলার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হলো বহু বছর ধরেই হাইকোর্টের নির্দেশনায় এই মামলার কার্যক্রম বন্ধ আছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পেলে খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মামলার কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে নিহতের সহোদর দৈনিক জনকণ্ঠের সাংবাদিক সাজেদ রহমান জানান, একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতকালে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে শামছুর রহমান হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিটি উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা। কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে, শামছুর রহমানের ২৪তম হত্যাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ যশোরে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রেসক্লাব যশোর, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরসহ অন্যান্য সংগঠন কালো ব্যাজ ধারণ, শোক র্যালি, শহীদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল করবে। এছাড়া, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণসভা।
একুশে সংবাদ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :