চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আশুরা মেলা ও জারি গানের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) প্রতিবছরের মতো এবারও পবিত্র আশুরার দিন রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার পূর্ব সৈয়দবাড়ি বড় হুজুরের মাজারসংলগ্ন তালুকদারবাড়ি দিঘির পাড়ে বসে এ মেলা।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে হাজার হাজার শিশুসহ সব বয়সীরা অংশ নেয় শত বছরের পুরনো দিনব্যাপী এ মেলাতে। এখানে পাওয়া যায় না এমন জিনিস নেই। গৃহস্থালিসামগ্রী থেকে শুরু করে বাচ্চাদের খেলনা, রকমারি খাবার, বেতের সামগ্রী, মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, তাঁতের কাপড় সবই পাওয়া যায়। আশপাশের গৃহিণীরা অপেক্ষায় থাকেন মেলার জন্য। কারণ, কিছু সামগ্রী মেলা ছাড়া পাওয়া যায় না। তবে শিশু-কিশোরদের মধ্যেই উচ্ছ্বাসটা বেশি। দিনভর নাগরদোলায় চড়া, নানা পিঠাপুলি খেয়ে আর খেলনা কিনে বাড়ি ফেরা। বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ জারি গানের আসরও বসে এই মেলায়। সন্ধ্যায় কারবালার প্রান্তরে হযরত মুহাম্মদ(দ:) এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন(রা:) এর শহীদ ও কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা বর্ণনা করে জারি গান করেন স্থানীয় গায়করা।
পূর্ব সৈয়দবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সৈয়্যদ মুহাম্মদ ওবাইদুল মোস্তফা নঈমী জানান, আমার দাদা বড় হুজুর কেবলার আমলে এখানে ১০ মহরম কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে জারি গান হতো। জারি গানে লোকজন সমবেত হলে এখানে ছোট ছোট খাবারের দোকান বসত। পরবর্তীতে এটি মেলাতে রূপ নেয়। প্রায় ৩০০ বছর আগে থেকে এই দিঘির পাড়ে আশুরা মেলা হয়ে আসছে। তাঁর দাদা মাওলানা রুহুল আমিনের কাছ থেকে তিনি এ ব্যাপারে জেনেছেন বলে জানান। আহমদ উল্লাহ জানান, প্রায় ৪০০ বছর আগে দিঘির পাড়ে সম্রাট শায়েস্তা খাঁ রাজবাড়ি গড়ে তোলেন। রাজবাড়ির অন্যান্য অবকাঠামোর সঙ্গে একটি মসজিদও ছিল, যার ধ্বংসাবশেষ ছাড়া এখন আর কিছুই নেই। ধ্বংসাবশেষে খচিত আরবি লেখাগুলো থেকেও ঐতিহাসিক আশুরা মেলার প্রমাণ মেলে।
মরিয়ম নগর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল ইসলাম হিরু জানান, মেলার আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে প্রতি বছর মেলার শেষ পর্যন্ত তদারকি করতে হয়। মেলায় যাতে গন্ডগোল না হয় এবারও তিনি শেষ পর্যন্ত ছিলেন। মেলায় বসা দোকানীদের কাছ থেকে তেমন টাকা পয়সা নেওয়া হয়না জানিয়ে তিনি বলেন স্থানীয় মসজিদের উন্নয়ন কাজের জন্য ১০/২০ টাকা নেওয়া হয়। তবে যারা দিতে চায়না তাদের কাছ থেকে জোর করে নেওয়া হয়না।
মেলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ তালুকদার বলেন, এটি শত বছরের প্রাচীন একটি মেলা। এটি উপভোগের জন্যই মূলত মানুষেরা সমবেত হয় এখানে। মানুষ আসার কারণে কিছু দোকানপাট বসে। এভাবেই এটি মেলায় রূপ নিয়েছে।প্রতি বছর ১০ মহররম মেলা বসলে ছোটদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো থাকে।
একুশে সংবাদ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :