ঠাকুরগাঁওয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে দোকানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি দ্রৌপদী দেবী আগরওয়ালসহ ৭৭ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বুধবার রাতে মো. জাকির হোসেন ঠাকুরগাঁও সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। জাকির হোসেন সদর উপজেলার মাদারগঞ্জ আরাজী পাইকপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দীনের ছেলে।
মামলার এজাহারে ৭৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে মামলাটি করা হয় বলে জানিয়েছেন ঠাকুরগাও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবিএম ফিরোজ ওয়াহিদ।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ আপেল, সদর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার, পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র ও আওয়ামী মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রিপন, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীর, সদর উপজেলা বেগুনবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বনি আমিন, ছাত্রলীগ নেতা রয়েল বড়ুয়া, পৌর যুবলীগ নেতা সোহেল, মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সোহাগ, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নজমুল হুদা শাহ্ এ্যাপোলো, পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুদৌল্লা সাহেব, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আকরাম, পৌরসভার কাউন্সিলর জমিরুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান গুড্ডু, মুন্সিপাড়ার ন্যাংড়া সাদ্দাম, ফরহাদ হোসেন, শাহাজাহান জনি, হেলাল, শান্তিনগর এলাকার জুয়েল, মোস্তফা কামাল, আশরাফুজ্জামান (মুক্তা সরকার), ছিট চিলাং এলাকার সুবর্ণ, মোখলেসুর রহমান, আব্বাস আলী, কিবরিয়া, নজরুল, আমিরা, মমিন, মাজহারুল, তপু, সোহারাব হোসেন, মোস্তাফা (তোতলা) নুর আলম, তৌফিক এলাহী, আকরাম হোসেন মিঠু, আমিরুল ইসলাম, রাজা মেম্বার, গোলাম মর্তুজা সরকার, সোহেল, ফরহাদ, রুবেল, আনারুল ইসলাম, মো. মন্টু, আনোয়ার হোসেন, হবিবর রহমান, মহিমউদ্দীন, হারুন, কামরুল ইসলাম, মোকসেদ (চোর), মো. ফারুক, কামরুজ্জামান (কামু), আজিজুর রহমান (আইজুল), মো. ফিরোজ, মোমিনুল ইসলাম, মিনহাজুল ইসলাম, আতাউর মৌলানা, মো. সাত্তার, মেহেদী হাসান, কুরবান আলী (আপন), মো. সেলিম, করিমুল্লাহ , আব্দুস নুর, মো. রাসেল (চোর), আলতাফ হোসেন, আরাজীপাইকপাড়া গ্রামের মাজহারুল ইসলাম, আবু সাঈদ, মো. মোস্তফা, সইফুল মেম্বার, রফিকুল, ব্যবসায়ী খাইরুল হক, মো. সামু, মো. তৈয়ব আমিন, মো. আলম, মো. সামসুজ্জামান।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা বাদীর ছেলে মো. রাকিবুল হাসান (রকি) সহ আল মামুন, শাওন পারভেজ ও আবু রায়হানকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন থেকে বিরত থাকার জন্য বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি ও প্ররোচনা দিতে থাকে এবং আসামিরা তাদের হত্যার পরিকল্পনা করে। দেশব্যাপী বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাকিবুল হাসান রকি, আল মামুন, শাওন পারভেজ ও আবু রায়হান আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য ঠাকুরগাঁও স্টেশন রোড এলাকায় বালিয়াডাঙ্গী -পীরগঞ্জ তিন রাস্তার মোড়ে জমায়েত হতে থাকে।
ঘটনার দিন (৫ আগস্ট) বিকেলে আসামিরা রাকিবুল হাসান (রকি) সহ আল মামুন, শাওন পারভেজ ও আবু রায়হানকে ১৮-২৪ নম্বর আসামি তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে কৌশলে ১৮ নম্বর আসামির বাড়িতে নিয়ে যায় এবং আন্দোলন বন্ধসহ অর্থের প্রস্তাব দেয় তাঁরা। এতে তাঁরা রাজি না হলে হুমকি দিতে থাকে। তাদের ঘরে মধ্যে আটকে রেখে বাইরে থেকে গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তাঁরা অগ্নিদগ্ধ হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক রাকিবুল হাসান রকিকে রংপুর মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করেন। আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখানকার চিকিৎসক ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করলে ১০ আগস্ট ভোর ৬টায় রাকিবুল হাসান রকি মারা যান। আর আল মামুন ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে মারা যায়। শাওন, পারভেজ ও আবু রায়হান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আরও বলা হয়, নিহতের দাফন প্রক্রিয়াসম্পন্ন ও সাক্ষীদের কাছ থেকে আসামিদের নাম সংগ্রহ করে এজাহার দায়েরে বিলম্ব হয়েছে। এরইমধ্যে মামলার ৩৭ নম্বর আসামি পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র ও আওয়ামী মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যাকে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাত ১টার দিকে বোদা থানার থানাপাড়ার জৈনিক শাহজাহানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত রাকিবুল হাসান রকির বাবা মো. জাকির হোসেনের দায়ের কৃত হত্যা মামলায় সাবেক মেয়রকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে বিচারক নিত্যানন্দ সরকার তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
আর মামলার প্রধান আসামি সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী ও ঠাকুরগাঁও ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনকে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে গ্রেপ্তার করে ছাত্র আন্দোলনে বিস্ফোরক ব্যবহারসহ দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলন দমানোর জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ প্রদানের অভিযোগে শনিবার (১৭ আগস্ট) বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে কারাগারে পাঠান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার রায়।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :