ঢাকার সাভারে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজিকালে মো. আজিজ (২৭) নামে এক তরুণকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) আশুলিয়া থানায় বাদি হয়ে ওই প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্থানীয় শ্রীপুর এলাকার মানিক মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী।
গ্রেপ্তার মো. আজিজ (২৭), আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের মধুপুর তালটেকী এলাকার মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে। তিনি বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলেও জানা গেছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে আজিজ ও তার সঙ্গী জাহাঙ্গীরসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জন লাঠিসোটা নিয়ে শ্রীপুর বৃহত্তর পাইকারি কাঁচা বাজারে ভুক্তভোগী মানিক মিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান। এসময় তারা নিজেদের সাভার-আশুলিয়া এলাকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীর বাসায় অবৈধ অস্ত্র ও গুলি আছে জানিয়ে তল্লাশি করতে চায়। এসময় নেতৃত্বদানকারী আজিজ ভুক্তভোগীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি প্রদান করেন। পরে তারা ভুক্তভোগীর বাসায় তল্লাশি করে কোন কিছু না পেয়ে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে এবং চার দিনের সময় বেঁধে দেয়। উক্ত সময়ে টাকা প্রদান না করলে ভুক্তভোগীকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলায় আসামী করা হবে বলে হুমকি প্রদান করে। পরে উপায় না পেয়ে বিষয়টি গতকাল শনিবার রাতেই অভিযুক্ত আজিজকে ডেকে নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণ হলে আজিজকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, ভুক্তভোগীর কাছে ইতোপূর্বেও প্রতারক আজিজের সহযোগী জাহাঙ্গীর খান হত্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এসময় জাহাঙ্গীরকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা প্রদান করেছিলেন ভুক্তভোগী।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী মানিক মিয়া বলেন, আমাকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য আজিজ নিজেকে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে হুমকি দিয়েছে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে ডাকা হলে তার প্রতারণার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের সামনে প্রমাণিত হয়। পরে তাকে মারধর করে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, গত কয়েক দিন আগেও ছাত্র হত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আজিজ আমার কাছে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সে থানায় সুযোগ বুঝে পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করে অভিযোগে নিরাপরাধ মানুষদের নাম জড়িয়ে এধরণের অপকর্ম করে আসছিলো।
প্রতারক আজিজের এলাকাবাসী জানান, গত জাতীয় নির্বাচনেও সে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয়কর্মী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ জং এর ঈগল মার্কার পোস্টার লাগামোর কাজ করেছে। ওই সময় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামের লোকজন তাকে মারধর করে। গণমাধ্যমেও বিষয়টি প্রচারিত হয়। হঠাৎ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরপর মর্মান্তিক ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনার সুযোগ নিয়ে থানায় যাওয়া শুরু করে আজিজ। এরপর নিজেকে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে এলাকার বেশ কিছু মানুষকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আসছে।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুর রহমান বলেন, প্রতারণার অভিযোগে আজ থাানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এঘটনায় অভিযুক্ত আজিজ নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :