কুড়িগ্রামের উলিপুরে কৃষ্ণমঙ্গল স্কুল এন্ড কলেজকে ধ্বংসের হাত থেকে বাচাঁতে ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নাগরিক সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় সর্বস্তরের জনগণের আয়োজনে কৃষ্ণমঙ্গল স্কুল এন্ড কলেজ চত্বরে নাগরিক সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নাগরিক সমাবেশে অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, আব্দুস সবুর, আশরাফুল আলম চিশতি শাহীন, রফিকুল ইসলাম আনছারি, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিপ্লব আনছারি প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ওই অধ্যক্ষের সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারনে প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখার পরিবেশ নেই বললেই চলে। অধ্যক্ষের দীর্ঘ সময়ে অনুপস্থিতির কারনে শ্রেণি কক্ষে নিয়মিত পাঠদান হয় না। অধ্যক্ষ একাধিক চাকরি প্রত্যাশীর কাছে টাকা নিয়ে ভূয়া নিয়োগ বোর্ড গঠন করে ভূয়া নিয়োগপত্র প্রদান করেন। বক্তারা আরো বলেন, প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকেও নিজ বাড়িতে বসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিমাস শেষে বিল উত্তোলনসহ নানাবিধ অনিয়মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজের পদ ঠিক রাখতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ম্যানেজ করে চলেছেন তিনি।
এবিষয়ে কৃষ্ণমঙ্গল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান সরকার তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আমাকে বেকায়দায় ফেলানো হয়। যখন যে পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয় তিনি টাকা নিয়ে থাকেন, এভাবেই অনিয়মগুলো বেশি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিরাপত্তাহীনতার কারনে নিয়মিত যাওয়া হয়নি।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউর রহমান লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে করে বলেন, অভিযোগ গুলোর তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই কৃষ্ণমঙ্গল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধনও করেন শিক্ষার্থীরা। সেদিনই শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের অপসারন চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কৃষ্ণমঙ্গল স্কুল এন্ড কলেজ। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ পান মাহমুদুল হাসান সরকার। এরপর থেকে তিনি শিক্ষক নিয়োগসহ ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। পরবর্তীতে অনেকের চাকরি না হওয়ায় তাদের চাপে ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। শিক্ষক প্যাটান অনুযায়ী কলেজ শাখায় কাঙ্খিত ছাত্র-ছাত্রী না থাকলেও শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন তুলে আসছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে অধ্যক্ষ এ ধরনের সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। দুর্নীতি প্রমানিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ শাখা-১১ (মাধ্যমিক-২) বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকা মহোদয়ের স্মারক নং-৩৭.০০.০০০০.০৭২.৩৯.০৬.১৬-৫২৩, তারিখ-১৯/০৬/২০১৭ অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান সরকারকে চাকুরি বিধিমালা ১৯৭৯ এর ১১ (ডি) ধারা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেন প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি হতে অপসারনের নির্দেশ প্রদান করেন। এরপরেও অজ্ঞাত কারনে বহাল তবিয়তে থেকে তিনি অধ্যক্ষের পদ আকড়ে ধরে আছেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :