মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের ভূয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়, বিদ্যুৎ এর ইউনিটের মূল্য দূরীকরণ, মানহীন মিটার তুলে নেওয়া সহ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ভূতুড়ে বিল তৈরিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহ এলাকার প্রায় ৫শতাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক। মানববন্ধনে আন্দোলনকারীরা দূর্ণীতিবাজ পল্লী বিদ্যুৎ এর ডিজিএম গোলাম ফারুক মীর এর প্রত্যাহারের দাবী জানান।
এদিকে পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় মানুষ জনের জড়ো হওয়ার সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। প্রায় আড়াই ঘন্টা ব্যাপি যান চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রীমঙ্গল-শমশেরনগর ও মৌলভীবাজার- আদমপুর রোডে ৫শতাধিক গাড়ি মানববন্ধনে আটকা পড়ে। এসময় ভুগান্তিতে পড়েন রোগী সহ সাধারণ পথচারীরা।
মঙ্গলবার (১অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে উপজেলা চৌমুহনীতে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনের পর ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। পরে আন্দোলনকারীরা পল্লী বিদ্যুৎ ঘেরাও করতে গেলে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুরোধে কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের আহব্বায়ক এম এ ওয়াহিদ রুলু মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারীদের সাথে আলোচনা করে ইউএনও কাছে সবাইকে নিয়ে যান। পরে ঘন্টাব্যাপি প্রশাসনের কার্যালয়ে আলোচনা করে সকলের বক্তব্য শুনেন এবং বিষয়টি দ্রত সমাধান করার জন্য আশ্বস্ত করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন, থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইফতেখার হোসেন, ওসি তদন্ত শামীম আকনজি, পৌর সভার সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ জামাল হোসেন, পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম গোলাম ফারুক মীর, প্রেসক্লাবের আহব্বায়ক এম এ ওয়াহিদ রুলু, সদস্য সচিব আহমেদুজ্জামান আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সাব্বির হোসেন, ব্যবসায়ী তৌফিক আহমেদ, শেখ জসিম উদ্দিন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও এলাকার ভুক্তভোগী বিদ্যুৎ গ্রাহক।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, ‘কমলগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাহকদের হয়রানি, মনগড়া বিল তৈরি ও অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছেন। দোষী কর্মকর্তাদের বিচার এবং ভূতুড়ে বিলের প্রতিকার করতে হবে। এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও মিটার রিডিং না করেই প্রকৃত বিলের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ বিল আদায়সহ বিভিন্ন রকম অনিয়ম করছেন। ’
এছাড়াও বক্তারা দাবী তুলে বলেন, ডিজিএম এর প্রত্যাহার, চলমান ডিজিটাল মিটার পরিবর্তন, ভূয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়, বিদ্যুৎ ইউনিটের মূল্য দূরীকরণ, মানহীন মিটার তুলে নেওয়া, মিটার ভাড়া ও ডিমান চার্জ প্রত্যাহারের দাবী সহ বিভিন্ন ইসু নিয়ে কথা বলেন তারা।’
ভুক্তভোগী গ্রাহক কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা রাজন আবেদীন বলেন, আমার বাড়িতে নিয়মীত বিল আসতো ১৭০০-১৮০০টাকা। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে বিল আসছে ৭৪২১টাকা। তাঁর ভাষ্য, বিদ্যুৎ কর্তারা ভুয়া বিল করেছেন।’
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার গৃহিণী আলেয়া খাতুনের ভাষ্য মতে, ‘আমার বিল আসতো ১২০০-১৩০০টাকা। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে বিল আসছে ৮ হাজার টাকা। এসব ভুয়া বিল করা কবে বন্ধ হবে আমি জানতে চাই। তিনি বিল সংশোধন ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।’
কৃষক সাজু মিয়া বলেন, ‘আমার জানুয়ারী থেকে আগস্ট পর্যন্ত একরকম বিল আসছে। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে তার চেয়ে ৪ গুন বাড়িয়ে আসছে। আমি গরীব মানুষ কিভাবে এত বিল পরিষদ করবো। সেটা নিয়ে চিন্তায় দিন পার করছি। তিনি আরও বলেন, লাফিয়ে লাফিয়ে বিদ্যুতের ইউনিট বাড়ার কারণ জানতে তিনি পল্লী বিদ্যুতের কার্যালয়ে গিয়ে বারবার হয়রানির শিকার হয়েছেন।’
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার বড়গাছ গ্রামের বাসিন্দা তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুতের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ঘরে বসে বিদ্যুৎ তৈরী করা যাবে না। মনগড়া বিল দিলে হবে না। সাধারন মানুষ পল্লী বিদ্যুতের যেন হয়রানীর শিকার না হয়।`
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :