বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ নাহিদ হাসানকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। নওগাঁর মান্দা উপজেলার ৯ নং তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের পিড়াকৈড় গ্রামের সাইদুর আলমের ছেলে নাহিদ ।
নাহিদের ছোট ভাই নাইম জানান, তার বাবা পেশায় একজন কৃষক। তারা ২ ভাই। সে ছোট। বর্তমানে সে রাজশাহী মদিনাতুল উলূম কামিল মাদ্রসার আলিম ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। অপরদিকে তার বড় ভাই নাহিদ রাজশাহী কোট কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। লেখাপড়ার পাশাপাশি জীবন জীবিকার তাগিতে প্রায় ৪ বছর যাবৎ ঢাকার রামপুরার বনশ্রীতে একটি ভাড়া বাসায় থেকে বনানীতে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত ছিলেন।
গত ২০ জুলাই ঢাকার রামপুরা বনশ্রী এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে গুলিবিদ্ধ হয় তার বড় ভাই। ওই সময় তার পিঠে গুলি লেগে ফুসফুস,খাদ্যনালী ও মলনাড়ী ফুটো হয়ে বুক দিয়ে বের হয়ে হয়ে যাওয়ায় সে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রথমে তাকে উদ্ধার বনশ্রীর ফরাজি হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর কমলাপুরের মুগদা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ওই সময় তার শারীরিক অবস্থা বেগতিক হওয়ায় সেখান থেকে পূণরায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করার পর রাত ১০ টার দিকে তাদেরকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর প্রথমে একটি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের ৬ ঘন্টা পর তার জ্ঞান ফিরে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার পুরো শরীর মারাত্মকভাবে ইনফেকশনে জর্জরিত হয়ে যায়।
গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরপর অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদের সরনাপন্ন হন তারা। পরবর্তীতে গত ১৫ আগষ্ট উপদেষ্টা নাহিদের আন্তরিক সহয়োগীতায় ১৭ আগষ্ট সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।
সেখানে আর্মির বিভাগীয় প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহণ করাবস্থায় পূনরায় তার শারীরিক অবস্থা বেগতিক দেখে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে তাকে প্রথমে ১৫ দিন ক্রিটিক্যাল নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) তে এবং ২২ দিন নরমাল আইসিইউতে রাখা হয়। এরমধ্যে তার শরীরে ইনফেকশনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গত ১৮ আগষ্ট ২য় বার অপারেশন করা হয়।
অপারেশনের পর ২ দিন তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এরমধ্যে ইনফেকশনে তার একটি কিডনী ড্যামেজ হয়ে যাওয়ায় ৫ দিন ডায়ালাইসিস করতে হয়। পরবর্তীতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর তার আরো ও একটি অপারেশন করা হয়।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা সারজিজ আলম এবং ২৮ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকারুজ্জামান তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং তার সার্বিক সহযোগীতা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতি ব্যাক্ত করেন। চিকিৎসা গ্রহণ শেষে তার শরীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় গত ১২ অক্টোবর তাকে রিলিজ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর সে নিজ এলাকায় আসার পর ৯নং তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন যুবদলের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। গত ২১ অক্টোবর (সোমবার) বিকেলে নওগাঁর মান্দা উপজেলার সাবাইহাটে এ উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া ও আলোচনা সভায় ৯নং তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি সানোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় ও সভাপতি আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, মান্দা উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক ও সাবেক ইউ’পি চেয়ারম্যান নাজমুল হক নাজু। এসময় বিএনপি,যুবদল,ছাত্রদল ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। শেষে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ নাহিদ হাসানের সুস্থতা কামনায় দোয়া করা হয়।
উল্লেখ্য,একাধিক অপারেশন,ঔষুধপত্র ও চিকিৎসা ব্যায় মিঠাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। এ পর্যন্ত তাদের প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যায় হয়ে গেছে। এমতাস্থায় আর্থিক সগযোগীতার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকার,রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সমাজের বিত্তবানদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানিয়েছেন তারা।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :