নেত্রকোনার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ`র বিরুদ্ধে কাজ না করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৪ অক্টোবর বাগজান গ্রামের মাইনুদ্দিন সহ অটজন জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে ইউপি সদস্যর দাবি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার নিজস্ব প্রকল্পের কাজ তিনি সঠিকভাবে করেছেন। তাকে পিআইসি করে উপজেলা প্রশাসন কয়েকটি প্রকল্প দিয়েছে। এগুলোতে সাইন করা ছাড়া আর কিছুই তাকে জানানো হয়নি। প্রকল্পে কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাগজান গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ। তিনি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ৯টি টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের সভাপতি। এরমধ্যে বাগজান মালেকের জমি হতে আইনাল হকের জমি, আইনাল হকের জমি হতে ওয়াহেদ মিয়ার জমি, মালেকের জমি হতে হাবিলের বাড়ী ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আবার মালেকের বাড়ি হতে আঞ্জু মিয়ার জমি ৪ মে.ট. চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরমধ্যে একটি প্রকল্পে কর্মসৃজন শ্রমিক দিয়ে সামান্য কাজ করা হয়েছে। বাগজান কোনাবাড়ি পাঞ্জেগানা মসজিদ উন্নয়ন একই অর্থ বছরের ৩য় পর্যায়ে ৯২ হাজার টাকা ও ৫২ হাজার টাকা বরাদ্ধ নেন তিনি। আব্দুল্লাহ মেম্বার মসজিদে কোন কাজ না করে এ টাকা আত্মসাত করেন। বাগজান প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে বড় মসজিদ পর্যন্ত রাস্তার মাটি কাটা প্রকল্পে বরাদ্দ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এখানে বেকু দিয়ে আট ঘন্টা ১৬ হাজার টাকা মাটি কেটে বাকী টাকা আত্মসাৎ করেন। একই অর্থবছর ৩য় পর্যায়ে বাগজান লড়িভাঙা সেতুর দুই পাশে মাটি ভরাট প্রকল্প ৫.৩৬০ মে.ট. চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেটির কাজ করা হয়। কিন্তু ৪র্থ পর্যায়ে আবার লড়িভাঙা সেতুর দুই পাশে দুটি প্রকল্পে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেন। একই ব্যাক্তি এক অর্থ বছরে এতগুলো প্রকল্প কিভাবে পায় তদন্ত করা দরকার।
সোমবার বাগজান গ্রামের ওইসব প্রকল্প এলাকার গিয়ে লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাগজান প্রাথমিক বিদ্যালয় হাতে বড় মসজিদ পর্যন্ত রাস্তায় গর্ত হয়ে যাওয়া বিভিন্ন জায়গায় ৭ ঘন্টা মাটি কেটেছেন বলে জানিয়েছে বেকুর মালিক আব্দুল লতিফ। এছাড়াও মালেকের জমি হতে আয়নাল হক, আঞ্জু, হাবিল ও ওয়াহেদ জমিসহ ঘুরেফিরে একই জায়গায় বেশ কিছু প্রকল্প দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের কয়েকজন শ্রমিক কিছুদিন কাজ করেন। এছাড়া অন্য কোন কাজ করা হয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন। চতুর্থ পর্যায়ে লড়ি ভাঙ্গা সেতুর দুই পাশে দুটি প্রকল্প দিয়ে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে কোন কাজ না করেই আত্মসাৎ করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
বাগজান গ্রামের কাঞ্চন মিয়া, লতিফ মিয়া, আসাদন ও কালাম মিয়া বলেন, প্রকল্প নিয়ে কোন কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন আব্দুল্লাহ মেম্বার। একজন ব্যক্তি এক অর্থ বছরে এতগুলো প্রকল্প সভাপতি কিভাবে হয়। তার কুটির জোর কোথায়? আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। এসব প্রকল্পের টাকা আত্মসাতকারীকে শাস্তির আওতায় আনা হোক। অন্যথায় এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আবদুল্লাহ জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাওয়া আমার নিজের প্রকল্প গুলো সঠিকভাবে কাজ করেছি। উপজেলা প্রশাসন আমাকে পিআইসি করে যে প্রকল্প গুলো বরাদ্দ দিয়েছেন এগুলো সাইন ছাড়া আর কিছু আমি জানিনা। আমি চাই তদন্ত করে প্রকৃত পক্ষে যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
তিয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান জানান, শুনেছি আব্দুল্লাহ মেম্বার বেশ কিছু টিআর কাবিখা প্রকল্পের বরাদ্দ পেয়েছেন। কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে কাজ না করার কোন সুযোগ নেই।
মদন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, সরজমিন পরিদর্শন করে কোন প্রকল্পের অনিয়ম পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।মদন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রেজোয়ান ইফতেখার জানান, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত করছি যদি কোন প্রকল্পের অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
অভিযোগের বিষয়টি জানতে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসকে ফোন করা হলে তিনি জানান আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইন গত ববস্থা নেয়া হবে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :