কালীগঞ্জ উপজেলার বাজারগুলোতে সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। সবজিসহ সকল নিত্যপণ্যের আকাশ ছোঁয়া দামে স্বস্থিতে নেই ক্রেতারা। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধগতির কারনে জনজীবনে ভোগান্তি বেড়েছে। সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। জনমনে প্রশ্ন এই সঙ্কটের জন্য কি সিন্ডিকেট এর জন্য দায়ী?
উপজেলার বেশ কিছু বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, লাগাম ছাড়া সবজির দামে নাভিশ্বাস উঠছে ক্রেতাদের। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। পৌর এলাকার কালীগঞ্জ বাজারে পণ্য ক্রয় করতে আসা একাধিক ক্রেতারা বলেন বিবেকহীন, অর্থলোভি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার অস্থির করে রেখেছেন। তা না হলে কাঁচা মরিচ কিভাবে ৪শ টাকা কেজি হয় কিভাবে? সাধারণ ক্রেতাদের ক্ষোভ স্থানীয় প্রশাসনের উপর। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন কেন কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না?
উপজেলার সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধু পেঁপে ছাড়া সকল সবজিই ৮০/১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাগামহীন দামের ঊর্ধ্বগতির তালিকায় রয়েছে কাঁচা মরিচ, যা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। টমেটো ২০০ টাকা, বরবটি ১২০ কাঁকরোল ১২০, কচুর লতি ১০০, ঝিঙা ৮০, পটল ৮০, ছোট ডাটা আটি ২০ টাকা, লালশাক নতুন ছোট এক মুঠি ২০ টাকা,পুঁইশাক ৫০ টাকা, গোল আলুু ৭০ টাকা, কচুর মুখি ৮০ টাকা, লেবুর হালি ৬০ টাকা, গাজর ২০০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০টাকা, লাউ ৮০ হতে ১০০ টাকা, শিম ২০০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, ফুল কপি ছোট ৬০ টাকা পিছ, ধইনা পাতা ২৪০ টাকা, পেয়াজ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দাম অন্য বছরের চাইতে এবার রেকর্ড ভেঙ্গেছে।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা মোঃ জহিরুল বলেন আড়ত হতে বেশী দামে কিনতে হচ্ছে। তাই চড়া দামে সকল সবজি বিক্রি করতে হয়। অপরদিকে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় গাজীপুরের বোগরা বাইপাস হতে কালীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত মালামাল আনতে খরচ বেড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে।
উপজেলার বাহাদুরশাদী ইউনিয়নের বাসাইর (জামালপুর) বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ী ইসমাইল মোড়ল জানান, এই বাজারে আশপাশের এলাকাগুলোতে এই মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে সবজি উৎপাদিত হয়। তবে এবারের অতিবৃষ্টিতে বেশ কিছু মৌসুমি সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে স্থানীয় ভাবে সবজির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরোও বলেন, সিন্ডিকেট বিগত সরকারের সৃষ্টি। বর্তমান সরকার এখন পর্যন্ত এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না।
বক্তারপুর মার্কেটে কাঁচা বাজার করতে আসা স্কুল শিক্ষক কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, সবজিসহ সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। প্রশাসনের উচিৎ সকল বাজারে আরোও ব্যাপক ভাবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখা।
জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মোটর মেকানিক বলেন, আগে যা ৪০-৫০ টাকায় কিনেছি, এখন সেই সবজি কিনতে হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। সবজি বাজারে এসে চোখে অন্ধকার দেখছি। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ও বাজার মনিটরিং এর বিষয়ে গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট এস.এম.ইমাম রাজী টুলু প্রতিবেদককে জানান, জেলা প্রশাসকের বিশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ব্যবসায়ীদেরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে উপজেলার সকল বাজার তদারকির আওতায় আনা হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভোগ্য পণ্য যাতে সঠিক দামে কিনতে পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখা উচিৎ। উপজেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্তর গাজীপুর কর্তৃক নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তদারকির অংশ হিসেবে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বাজারে বিশেষ মনিটরিং ও ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :