যশোরের অভয়নগর উপজেলার পাচু বিশ্বাস (৭০ ) প্রায় ৫৫ বছর ধরে বাঁশের তৈরি হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন। পৈতৃক পেশা ও পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে এই বয়সেও পরিশ্রম করে চলেছেন তিনি। আধুনিক প্লাস্টিক সামগ্রীর কারণে বাজারের চাহিদা কমছে, তারপরও পৈত্রিক পেশা টিকিয়ে রাখতে আর সংসার চালাতে বাঁশ ও কঞ্চি দিয়ে তৈরী করেন হাঁস-মুরগির খাঁচা, ডালা , ঝুঁড়ি, চালনী, কুলা সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র।
অভয়নগর উপজেলার ভাটপাড়ার ঋষি পাড়ায় গিয়ে দেখা যায় বাঁশ দিয়ে ডালা তৈরি করছেন তিনি, তার পাশেই একান্ত মনে কাজ করে চলেছেন তারই সমবয়সী কার্তিক বিশ্বাস। এখানে বসবাস করা ১১০ টির মতো পরিবার এই পেশার সাথে জড়িত।
তাদের তৈরি করা এসব পণ্য সপ্তাহ শেষে পাইকারী ভাবে প্রকার ভেদে ১০ টি ডালা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, ১০ টি চালনি ৯০০ টাকা, ১০ টি ঝুঁড়ি ১৫০০ টাকা, ১০টি মুরগির খাঁচা বিক্রি করেন ১০০০ টাকায়।
কাঁচা মালের দাম বৃদ্ধি ও চাহিদা কমে যাওয়াতে লাভের পরিমাণ ও কমে গেছে। ফলে একজন মানুষের মাসে আয় হচ্ছে মাত্র ৬-৭ হাজার টাকা।
পৃষ্ঠপোষকতা ও আধুনিক পণ্য বিপণনের সুবিধা না থাকায় অভাব যেন পিছু ছাড়ছে না তাদের । নিদারুণ অর্থ কষ্টের মধ্যে চার সন্তানকে বড় করেছেন পাচু বিশ্বাস । অত্যধিক পরিশ্রম আর আয় কম থাকার জন্য তার ৫ ছেলের কেউ এই পেশায় নেই, আর ১ মেয়ে বিবাহিত।
কথা হয় একই এলাকার বাসিন্দা তাপসী বিশ্বাস (৪৫) এর সাথে। তিনি ২৫ বছর ধরে বাঁশ দিয়ে নানারকম জিনিস তৈরি করছেন। স্বামী কর্মহীন হওয়াতে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে ।
তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে হাতের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি, এই আয় দিয়েই আর আত্মীয়দের সহযোগিতা নিয়ে সন্তানদের বড় করেছি । আত্মীয়রা মাঝে মধ্যে সহায়তা না করলে বেঁচে থাকতে পারতাম না। তিনি বলেন, ব্যাবসা টিকিয়ে রাখতে হলে এ ব্যবসার প্রসার প্রয়োজন। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
আধুনিকায়নের ফলে প্লাস্টিক সামগ্রী সহজলভ্য হওয়ায় বাঁশের তৈরি হস্তশিল্পের বাজার এখন আগের মতো নেই। তার তৈরি বাঁশের সামগ্রী বিক্রি করে মাসে উপার্জন হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত আয় হওয়ায় পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে জীবন কাটছে তার। সরেজমিনে দেখা যায়, ঘনবসতি পূর্ণ এই এলাকায় শিক্ষার হার অনেক কম।অভাব অনটনের চিহ্ন প্রায় সব পরিবারেই।
এলাকাবাসীরা বলেন, আমাদের এখানে কোন সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পাইনি। কোন সহযোগিতা না পেলে আমাদের এই পেশা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
৬ নং বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তৈয়েবুর রহমান বলেন, আমাদের ইউনিয়নে এডিপিসহ যে সকল বরাদ্দ আসে তা থেকে এই সকল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা করে থাকি। এছাড়া এ বছর ৫০ জন ঋষিকে জনপ্রতি ১০টি করে বাঁশ দেওয়া হয়েছে, সরকারিভাবে আরও সহযোগিতা পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রাজকুমার পাল বলেন, হস্ত শিল্পে সরকারি সহযোগিতা বা প্রণোদনা বিষয়ে কোন উদ্যোগ এই মূহুর্তে নেই। তবে আগামীতে জেলা পর্যায়ে মিটিং এ বিষয়টি উত্থাপন করব।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :