কাক ডাকা ভোর থেকে ক্রেতা বিক্রেতার ভিড়ে জমে উঠে সিরাজগঞ্জের পাঁচলিয়া গামছার হাট। গুণগতমান ভালো হওয়ায় এখানকার গামছার চাহিদা রয়েছে দেশ জুড়ে। প্রতি হাটে প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার গামছা ও সুতা বিক্রি হয় এখানে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রঙ ও সুতার অনিয়ন্ত্রিত দামে গামছা তৈরি করে পুষিয়ে উঠতে পারছেন না তারা। তবে এখানকার উৎপাদিত গামছাকে ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যের তালিকাভুক্ত করাসহ তাঁতিদের সহযোগিতার কথা জানিয়েছে তাঁত বোর্ড।
তাঁত সমৃদ্ধ জেলা সিরাজগঞ্জ। এখানকার তৈরি তাঁতের শাড়ির যেমন সুনাম রয়েছে তেমনি জেলার পাঁচলিয়া, নলকা, পাইকারসহ বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি হয় বাহারি রকমের গামছা। তাঁতিদের নিপুণ হাতে তৈরি এসব গামছার গুণগত মান ভালো হওয়ায় চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।
গামছা বেচাকেনার জন্য তাই প্রায় শত বছর আগে পাঁচলিয়াতে গড়ে উঠে গামছার হাট। মঙ্গলবার ও শুক্রবার সপ্তাহে দুদিন ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় সকাল ৯টার পরপরই। তাই ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের তৈরি রঙ-বেরঙের গামছা নিয়ে হাটে আসেন তাঁতিরা।
হাটে পাওয়া যায় এক হাত থেকে প্রকারভেদে ছয় হাত পর্যন্ত লম্বা বাহারি গামছা। চার পিসে এক থান হওয়ায় আকার অনুযায়ী প্রতি থান গামছা সর্বনিম্ন ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায় বিক্রি হয় পাইকারি দরে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা গামছা কিনতে আসেন এই পাঁচলিয়া হাটে।
হাটের ব্যবসায়ী হাসেম আলী বলেন, গামছা বেচাকেনার জন্য প্রায় শত বছর আগে পাঁচলিয়াতে গড়ে উঠে এই গামছার হাট। মঙ্গলবার ও শুক্রবার সপ্তাহে দুদিন বেচাকেনা চলে এই হাটে। তাঁতিরা গামছার পেটিগুলো মাথায় নিয়ে ঘুরতে থাকে। আর পাইকারদের পছন্দের সঙ্গে দামে মিললেই সেগুলো কিনে নেন তারা।
তাঁত মালিক হৃদয় জানান, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এখান থেকে গামছা কিনে বিক্রি করে থাকে। উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ এই গামছার হাটে বিক্রিও বেশ ভালো।
তবে অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ক্রমাগত রঙ, সুতাসহ গামছা তৈরির উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে লোকসানের চাপ ঘিরে ধরেছে তাদের।
তাঁত মালিক খন্দকার জাহাঙ্গীর বলেন, অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থার কারণে ক্রমাগত রঙ ও সুতাসহ গামছা তৈরির উপকরণে দাম বৃদ্ধিতে পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁতের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
এ পরিস্থিতিতে সিরাজগঞ্জের গামছাকে জিআই পণ্যের তালিকাভুক্ত করাসহ তাঁতিদের সহযোগিতার কথা জানিয়েছে তাঁত বোর্ড।
সিরাজগঞ্জ তাঁত বোর্ডের লিঁয়াজু কর্মকর্তা অমিত সরকার জানান, সিরাজগঞ্জের গামছাকে জিআই পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রঙ ও সুতার বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করবে বোর্ড।
উল্লেখ্য, প্রতি হাটে প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার গামছা ও সুতা বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :